মঙ্গলবার সকাল ৯টা। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামের লাল বানু। বয়স ৬৫ বছর। পা ফুলে আছে। কোমড়ে ব্যাথা। দীর্ঘ দিন থেকে লাল বানু এসব রোগে ভুগছেন। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ৫টাকা দিয়ে একটি টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখালেন তিনি ।
যে ডাক্তার লাল বানুকে দেখে ওষুধ লিখে দিয়েছেন তিনি একজন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)। নাম ডা. সুবল চন্দ্র শীল। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে রোগী দেখেন স্যাকমো পদমর্যাদার চিকিৎসকরা। প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগী দেখেন চার জন স্যাকমো।
হাসপাতালের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই আট মাসে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১৩ লাখ ৮ হাজার ৯৯৮ জন সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৩৯ হাজার ৮১, মহিলা ৫৫ হাজার ১২৬ ও পুরুষ ৪৪ হাজার ৭৯১ জন।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে শহরের কালিকাপুর এলাকায় একশ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে এটি ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পড়ে ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে এই হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও লোকবল বাড়ানো হয়নি।
২৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালটিতে তত্ত্বাবধায়কসহ ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু এখন কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ৩৯টি পদই শূন্য। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকতে হচ্ছে। সহকারী পরিচালক পদটি শূন্য। বাকি ১৭ জন চিকিৎসককে সকল চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০টি পদের মধ্যে চর্ম ও যৌন এবং কার্ডিওলজি এই দুইটি পদ শূন্য।
জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১টি পদের মধ্যে চক্ষু, কার্ডিওলজি, এ্যনেসথেসিয়া, রেডিওলজি, এবং সার্জারি পাঁচটি পদ শূন্য। এছাড়াও আবাসিক ফিজিশিয়ান, আবাসিক সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এই তিনটি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এ্যানেসথিস্টি এর তিন পদ থাকলেও তা শূন্য রয়েছে। ডেন্টাল সার্জন কর্মরত থাকলেও প্যাথলোজিস্ট রেডিওলোজিস্ট এই পদ দুইটি শূন্য।
এদিকে হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারের ১০টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন। নয়টি পদই শূন্য। সহকারী রেজিষ্ট্রার ১১ টি পদে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। ১০ টি পদ শূন্য। আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার কর্মরত থাকলেও জরুরি মেডিকেল অফিসারের চারটি পদই শূন্য। এতে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক সংকট থাকায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) ডা. সুবল চন্দ্রশীল বলেন, আসলে জটিল রোগী মনে হলে হাসপাতালের কনসালটেন্ট বরাবরে রোগী রেফার করে থাকি। এভাবেই আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, স্যাকমো চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করছে। তবে হাসপাতালে স্যাকমোর কোনো পদই নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে বহির্বিভাগে চারজন স্যাকমো চিকিৎসক এই হাসপাতালে পদায়ন করে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চিকিৎসকের চরম সংকট চলছে। বিশেষ করে মেডিকেল অফিসারসহ সমমানের ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুই জন। বিষয়টি বার বার স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হলেও তাতে গুরুত্ত দিচ্ছেন না। তবে জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল অফিসারদের শূন্য পদ পূরণ হলে চিকিৎসক সঙ্কট কমবে এবং বহির্বিভাগেও রোগীরা উন্নত সেবা পাবেন।