না চড়াই-উৎড়াই আর দীর্ঘ অপেক্ষার পর পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শরীয়তপুরের জাজিরা-মাওয়া পয়েন্টের পদ্মার তীরে চলছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নপূরণের কাজ। এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের পথে পদ্মা সেতু। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বহু প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ।
দিন-রাত পরিশ্রম করছেন তিন হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি শ্রমিক। ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন ও ট্রেন। এই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে সবকিছু। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ।
শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে নির্মিত হতে যাচ্ছে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্র, হাইটেক পার্ক, জাহাজ নির্মাণের কারখানা, সোলার প্লান্টসহ বড় বড় সব প্রকল্প। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৩৭ ভাগ কাজ আর মূল সেতুর ২৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মিত হয়েছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার, সার্ভিস এরিয়া, পুনর্বাসন প্রকল্প। জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজা নির্মাণকাজও শেষের পথে। সেতুর কাজ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক প্রায় প্রস্তুত।
সংযোগ সড়কের জন্য কাওড়াকান্দি ঘাট সরিয়ে আনা হয়েছে কাঁঠালবাড়িতে, যার ফলে ফেরিপথে কমে এসেছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতুর মূল সংযোগ সড়ক ও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে যোগ করতে নতুন ছয় কিলোমিটার সার্বিক সড়কের কাজ চলছে পুরোদমে। এর ফলে ফেরি থেকে নেমে যানবাহনগুলো যেতে পারবে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক খুলে দেয়া হবে আগামী ডিসেম্বর মাসে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার এক বছর পরও রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে অব্যাহত রাখতে হবে ফেরি যোগাযোগ। আর সেতু চালুর দুই বছর আগেই সংযোগ সড়ক খুলে দেয়া হলে আগেভাগেই অর্থনীতির গতিসঞ্চার হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করবেন দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাঝিরঘাট ও কাওড়াকান্দিতে লঞ্চ, স্প্রিড বোট এবং ছোট ছোট ফেরিতে ২১ জেলার কোটি মানুষের যাতায়াত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসেন পদ্মা সেতুর এলাকা ঘুরে দেখতে। পদ্মার বুকে বিশাল কর্মযজ্ঞ স্থানীয়দের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টের এলাকা ঘুরে দেখতে আসা গুলনাহার বেগম, রবিউল ইসলাম ও ইমরান খলিফা বলেন, আমরা অনেক আগ থেকেই শুনছি, পদ্মা সেতুর কাজ চলছে। আসি আসি করে আসা হয়নি, তাই আজ পদ্মা সেতুর কাজ দেখতে এসেছি। এসে দেখি পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। সেতুটা হলে আমাদের ঢাকা যেতে অনেক সুবিধা হবে।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক কর্নেল মনিরুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ ৩৭ ভাগ আর মূল সেতুর কাজ ২৯ ভাগ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া টোল কাজ গত জুলাই মাসে শেষ হয়েছে। জাজিরা ও মাওয়ার দুই প্রান্তেই দুটি পরিপূর্ণ পুলিশ স্টেশন বা থানা কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে। এর কাজটুকু শেষ হবে ২০১৭ সালের মধ্যে।
তিনি বলেন, জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক আমরা ডিসেম্বর মাসে খুলে দিতে পারবো। তাতে করে দু’বছর আগেই দেশের মানুষ এ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের অন্তত একটা সুফল পেতে শুরু করবে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে শরীয়তপুরবাসীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। শরীয়তপুরের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে।