রংপুর চিনিকলের আওতাধীন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁতালদের উচ্ছেদ, তাদের উপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে গোবিন্দগঞ্জ থানায় আরও একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার ২০ দিন পর সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির পক্ষে থমাস হেম্রব্রন বাদী হয়ে শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ থানায় এজাহারটি দায়ের করেন। গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আল মো. নাজমুল আহমেদ এজাহারটি গ্রহণ করেন।
এজাহার দায়ের করার সময় থমাস হেম্রব্রনের সঙ্গে মানবাধিকার সংস্থা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নিজেরা পারি, ব্লাস্ট ও এএলআরডি’র ১০ সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।
এজাহারে ৩৩ জন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে গাইবান্ধা-৪ আসনের (গোবিন্দগঞ্জ) সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হান্নান, রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল, সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাকিল আহম্মেদ বুলবুল ও কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করীম রফিকের নাম রয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাঁওতালদের উপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় থমাস হেম্রব্রনের এজাহার নেয়া হয়েছে। এজাহার পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে মামলাটি রুজু করা হবে।
এর আগে, ঘটনার ১১ দিন পর ১৬ নভেম্বর ক্ষতিগ্রস্থ সাঁওতালদের পক্ষে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মুরমুরের ছেলে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচ থেকে ছয়শ জনকে আসামি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ ২১ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।
কিন্তু মামলা দায়ের করার পর গোবিন্দগঞ্জসহ সাঁওতাল পল্লীতে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। আদিবাসী সাঁওতালদের পক্ষে মামলা দায়েরকারী স্বপন মুরমু নামের ওই ব্যক্তি সাঁওতালদের ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির কোনো নেতা নয়।
তিনি পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলা সংলগ্ন ঘোড়াঘাট এলাকার মুরালীপাড়া গ্রামের প্রকৃত বাসিন্দা বলে সাঁওতাল নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সুত্র থেকে এখন বলা হচ্ছে। সাঁওতালদের ধারণা, বিশেষ প্রভাবশালী মহলের স্বার্থ রক্ষায় তাকে দিয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাসহ গোটা জেলায় তোলপাড় শুরু হয়। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালরা মামলার সিন্ধান্ত নেয়।
প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের শ্রমিক-কর্মচারীরা পুলিশ পাহারায় আখ কাটতে গেলে তাদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন। সংঘর্ষে সাঁওতালদের ছোড়া তীরবিদ্ধ হয়ে ৮ পুলিশ আহত হয়। সংঘর্ষের পর পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সাঁওতালদের কয়েকশ ঘর ভাঙচুর করে আগুনে পোড়ানো হয়।