ছোট্ট শিশু হালিমা। বয়স সাত বছর। পড়ালেখায় বেশ মেধাবী। তবে ফুটফুটে হালিমা অন্য শিশুদের চেয়ে আলাদা। যে বয়সে তার বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়া ও সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা সে বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছে সে।
কারণ মেরুদণ্ডজনিত সমস্যায় ভুগছে সে। বুকের খাঁচাও বাঁকা হয়ে গেছে। এখন হাঁটাচলা তো দূরের কথা সোজা হয়ে দাঁড়ানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। জন্মগত এ সমস্যাটি তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় হালিমা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হালিমার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তার অপারেশন করতে হবে। তবে সেটা খুবই ব্যয়বহুল। হালিমার দরিদ্র বাবার পক্ষে সে টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়।
ভোলা শহরের উত্তর চরনোয়াবাদ এলাকার হানিফ বাবুর্চির মেয়ে হালিমা। হানিফ ডেকোরেটরে কাজ করেন। ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ময়নাসহ দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তাদের বড় মেয়ে হালিমা স্থানীয় উত্তর চরনোয়াবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
হানিফ বাবুর্চি বলেন, ছোটবেলায় স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়েছিলো হালিমা। দুই বছর আগে হঠাৎ করেই শরীরের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। প্রথমে ভোলায় চিকিৎসা করানোর পর বরিশালে চিকিৎসা করানো হয়। তাতে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। ধারদেনা করে নেয়া দুই লাখ টাকা এখনও শোধ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে হালিমার আরো বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। মেরুদণ্ড ও বুকের খাঁচা বাঁকা হয়ে গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করতে বলেছেন। তবে এ জন্য খরচ হবে তিন লাখ টাকা। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করানো আমার সাধ্যের বাইরে।
হালিমার মা ময়না বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অন্য শিশুরা খেলাধুলা করতে পারলেও আমাদের মেয়ে কিছুই করতে পারছে না। কিছু খেতে পারে না। খাবার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে রয়েছি। কীভাবে চিকিৎসা করাবো?
হালিমার চিকিৎসা করছেন ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তৌহিদুল ইসলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, শিশুটি জম্মগতভাবেই মেরুদণ্ড বাঁকা সমস্যা নিয়ে জম্মগ্রহণ করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে ‘কাইফেসিস’ বলা হয়।
তিনি বলেন, শিশু হালিমার মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে আরো বড় হয়ে বেঁকে যাচ্ছে, এতে ফুসফুস ও হার্ডে মারাত্মক সমস্যা হবে। চিকিৎসা না করালে তাকে বাঁচানো অসম্ভব। তবে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে এর চিকিৎসা চালু হয়েছে। মেরুদণ্ডের অপারেশন করে হয়ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে এ রোগের চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল। কমপক্ষে দুই লাখ টাকা লাগতে পারে।
হালিমার বাবা হানিফ বাবুর্চি জানান, মাত্র ছয় হাজার টাকার বেতনে চাকরি করি। তার পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা কঠিন। মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
হয়তো একটু সাহায্য পেলেই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে ছোট্ট শিশু হালিমা। হালিমাকে বাঁচাতে ০১৭১০-৯৫৩৮৯৩ নাম্বারে যোগাযোগ করে সাহায্য করতে পারেন।