মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করছে সেনারা। গ্রামে গ্রামে কয়েক হাজার বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে তারা। পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আর বহু নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করছে সেনারা।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নারীরা জানিয়েছে সেই সব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। সেনাদের হাত থেকে পালিয়ে আসা বিশ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণী হাবিবা জানিয়েছেন, ‘বিছানার সঙ্গে ওরা আমাদের দুই বোনকে বেঁধে রেখেছিল। এরপর এক এক করে সেনা এসে আমাদের ধর্ষণ করেছে।’
মায়ানমার থেকে পালিয়ে এলেও সেই আতঙ্ক এখনও তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সেনাদের অত্যাচারের বিবরণ দিতে গিয়ে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল ওই তরুণীর মুখ। পাশে বসে ছিল তার আরো দুই ভাই-বোন, তারাও সেনাদের অত্যাচারের সাক্ষী।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসাদের অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশি বাংলাদেশে। হাবিবার ছোট ভাই হাসিম উল্লাহ জানিয়েছে, সেখানে তাদের ঠিক মত খেতেও পেতো না। বহুদিন তাদের উপবাসে কাটাতে হয়েছে।
দুই বোনের সঙ্গে প্রাণ হাতে করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে হাসিম। এখানে অন্তত কেউ তাদের খুন করার চেষ্টা করবে না বা শারীরিকভাবে অত্যাচার করবে না ভেবে যেন কিছু স্বস্তি পাচ্ছে তারা।
হাবিবার ছোট বোন সামিরার বয়স ১৮। মিয়ানমারের উদাং গ্রামে ছিল তাদের বাড়ি। সেখানে হানা দেয় সেনা জওয়ানরা। দুই বোনকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর তাদের ঘরে আগুন দিয়ে চলে যায় সেনারা। এর আগেই তাদের বাবাকে হত্যা করা হয়।
শুধু হাবিবা বা সামিরাই নয়। এই দুই বোনের মতো প্রতিদিন আরো অনেক রোহিঙ্গা কিশোরী-যুবতী ধর্ষিত হচ্ছে। বাধা দেয়া হলে তাদের নৃশংসভাবে মেরে ফেলে চলে যাচ্ছে সেনারা। যাওয়ার সময় বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।
হাবিবা জানালো, পালিয়ে না এসে উপায়ও ছিল না। সেনারা চলে যাওয়ার আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল এরপর আবার তাদের দেখতে পেলে খুন করা হবে। তারা যেন পালাতে বাধ্য হয় সেজন্যই তাদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়াতেই সেনারা তাদের উপর শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছে, গণহারে ধর্ষণ করছে। এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে যেন উদ্বাস্তুরা ভয়ে পালিয়ে যায়। জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, সেনাদের অত্যাচারে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।