‘ভোগান্তি তো কেবল শুরু। এটি আরো বাড়বে- কনফার্ম। দু-তিন বছরের জন্য মিরপুর এলাকা ছেড়ে দিতে হবে। এমন কথাই বলছিলেন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আজিমপুরগামী এক বাস যাত্রী’। পাশের সিটে বসে এক যাত্রী বলেন, ভাই, উন্নয়ন চাইলে কিছুটা ভোগান্তি মেনে নিতেই হবে। এর পরই আসবে মিরপুরবাসীর জন্য ভালো সময়।
বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, মেট্রোরেলে বদলে যাবে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা। কমে যাবে যানজট, যাতায়াতে আসবে নতুন দিগন্ত। কিন্তু এ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে যে ভোগান্তি, তা এড়ানো যাবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে রোকেয়া সরণি হয়ে তালতলা যেতে শেওড়াপাড়ায় সড়ক বিভাজকের বাঁ-পাশে মধ্য লেন বরাবর দড়ি ও খুঁটি দিয়ে বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সড়কের মধ্যাংশ। চিহ্নিত করে বেঁধে রাখা অংশ চলে গেছে আগারগাঁও আবহাওয়া অফিস পর্যন্ত। ফলে এ রুটে চলাচলে গতি কমে গেছে। বেষ্টনীর দুই পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে চলছে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যান। এতে অফিস সময়ে পুরো রাস্তাই যানজটে থেমে থাকে।
জানা গেছে, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট বা মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত ছয় লেন সড়কের পূর্ব দিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) লাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। লাইনটি তিন দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ। এজন্য গত ১ নভেম্বর থেকে সড়ক কেটে গর্ত তৈরি করা হচ্ছে। আগে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ চললেও, এখন তা দিনেও চলছে। ফলে সকাল ৭টা থেকে ১০টা ও বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কে যানজট হচ্ছে।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, শেওড়াপাড়ায় বন্ধ করে দেয়া সড়কের ওপর এক্সকাভেটর (রাস্তা কাটার মেশিন) চালানো হচ্ছে । ঘটাঘট শব্দে কাটা হচ্ছে সড়ক। সড়কের মধ্য অংশ বন্ধ থাকায় দুই পাশ দিয়ে চাপাচাপি করে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। এতে যাত্রীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়ছেন।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, কষ্ট হচ্ছে ঠিক। কিন্তু এটা যাতে কমিয়ে আনা যায়- সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা ও ফুটপাত উচ্ছেদ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৬০০ মিটার করে রাস্তা কাঁটা হবে। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত লাইন সরাতে ও প্রতিস্থাপনে আড়াই মাস লাগবে। আগামী জুনের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। তখন সড়কের বেশি অংশ বন্ধ রেখে কাজ করতে হবে। এছাড়া পাইলিংয়ের জন্য ১৩টি সেবা সংস্থার লাইন সরাতে হবে।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেল প্রকল্পে ব্যয়ের ২২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান সরকার। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী, মিরপুর-১০, রোকেয়া সরণি, আগারগাঁও, খামারবাড়ী, সোনারগাঁও মোড়, দোয়েল চত্বর হয়ে মেট্রোরেল মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত বসবে খুঁটির ওপর। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে মেট্রোরেল। উত্তরা তৃতীয় পর্বে ডিপো নির্মাণের কাজ চলছে। এ কাজ করছে টোকিও কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।