প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করেছেন

প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করেছেন

ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীরত্ব খেতাবপ্রাপ্ত জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে এই প্রথমবারের মতো পরিচয়পত্র বিতরণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনীর এক সংবর্ধনায় এই পরিচয়পত্র বিতরণকালে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৬ উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠগণের উত্তরাধিকার ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবানিহী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করে তিনি আনন্দিত। এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা রেল, বিআরটিসি বাস ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের ফেরীতে বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক রুটে একবার বিদেশ ভ্রমণ এবং একই এয়ারলাইন্সে জীবনে একবার হজ/ওমরাহ করার সুযোগ পাবেন। তারা বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ও ফেরীতে ভিআইপি কক্ষ ও কেবিন সুবিধা পাবেন। এছাড়া এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৭ বীরশ্রেষ্ঠ’র উত্তরাধিকার ও অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্তগণের মাঝে সম্মানীর চেক এবং শাল ও মোবাইল ট্যাবসহ উপহার বিতরণ করেন।
তিনি যুদ্ধ ও শান্তির সময় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সেনাবাহিনীর ৫ কর্মকর্তাকে বাহিনী পদক ও অসামান্য সেবা পদক প্রদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের মাধ্যমে লাল-সবুজের পতাকাসহ একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এজন্য আমাদের সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ও তাদের অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে নিরলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে অমূল্য অবদান তা স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসুরীদের জন্য অনেক কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং আরো অনেক প্রস্তাব ও পরিকল্পনা বিবেচনার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, বীরশ্রেষ্ঠদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার টাকা, বীরউত্তম ২৫ হাজার, বীর বিক্রম ২০ হাজার ও বীর প্রতীকদের ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা মাত্র নয়শ’ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে সুবিধাভোগীদের সংখ্যা এক লাখ থেকে দুই লাখে উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা, চিকিৎসা ও রেশন প্রদানের জন্য ২৪৮৭.১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার লক্ষ্যে ডাটাবেজ উন্নয়নে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডাটাবেজ কর্মসূচি সম্পন্ন করার মাধ্যমে জাতির কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নিখুঁত তালিকা উপস্থাপন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই হাজার ৯৭১টি গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘জেলা মুক্তিযেদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের’ অধীনে ইতোমধ্যে ৪৩টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ সম্পন্ন এবং হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে সরকার এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের স্কিম গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১৬১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে এবং কেউ এই ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী সদস্যরা ও সাধারণ জনগণ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ পরিচালনা করে যা মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের পথে নিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশাল দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যা দেশের উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বিরাট ভূমিকা রাখছে। তারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার আধুনিকায়ন, অবকাঠামোর উন্নয়নসহ কল্যাণভিত্তিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
এই ধারা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ও শান্তিকালীন অবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ বর্তমান সরকার ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে যুদ্ধ ও শান্তিকালীন পদক প্রবর্তন করেছে। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য সহায়ক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ সদস্যের আজ শান্তিপদক প্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতির যেকোন প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী নিবেদিত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস শুধুমাত্র দেশেই নয়, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের সততা, নৈতিকতা ও দক্ষতার মাধ্যমে বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।’

অন্যান্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর