নতুন বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক বসছে বুধবার দুপুরে। গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পরিচালনা পর্ষদের বাকি আট সদস্য উপস্থিত থাকবেন।
বৈঠকে নতুন ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র। একই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের (এনআরবি ব্যাংক) বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এই বৈঠকে।
এদিকে, প্রথম দিকে পাঁচটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিলো সরকারের। তবে রাজনৈতিক কারণে সরকারকে সরে আসতে হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সরকার বর্তমানে ১০টি নতুন ব্যাংক দিতে চায়।
অপরদিকে, প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের মালিকানায় তিনটি ব্যাংক (এনআরবি ব্যাংক) দিবে সরকার। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামীকালকের বোর্ড মিটিং এ।
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাংকের জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে যথাযথ প্রক্রিয়া ও শর্ত সাপেক্ষে আবেদন আহ্বান করা হয়ে। এতে আগ্রহীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয়।
এ নিয়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের জানান, নতুন ব্যাংক দেওয়া হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে। তিনি সংসদেও বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে নমনীয় হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর বোর্ডসভায় নতুন ব্যাংক দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
কোনো ঋণ খেলাপী যাতে আবেদন করতে না পারে এমন শর্ত রাখা হয়েছিলো আবেদনের যোগ্যতায়। ৪০০ কোটি টাকার মূলধন, একজন উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ মোট মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার অধিকারী, বিগত ৫ বছরে খেলাপি থাকলে বা এ বিষয়ক কোনো মামলা আদালতে অনিষ্পত্তি থাকলে তার আবেদন বিবেচনায় না নেওয়া, পরিচালনা পর্ষদে সর্বাধিক ১৩ সদস্য, উদ্যোক্তার আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত নিট সম্পদ থেকে ব্যাংকের মূলধন সরবরাহ, উদ্যোক্তা বা পরিচালকের সততা ও যোগ্যতা যাচাইসহ আরো বেশি কিছু কঠিন বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, মোট ৩৭টি আবেদন জমা পড়ে নতুন ব্যাংকের জন্য। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬টি আবেদন চূড়ান্ত করেছে কমিটি। তালিকা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়। এ থেকে সরকার চূড়ান্ত করে একটি তালিকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড সভা সেই মোকাবেক সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
আরেকটি সূত্র জানায়, আবেদনকারী উদ্যোক্তারা সবাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সম্পৃক্ত। তাই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না সরকারও। কাকে বাদ দিয়ে কাকে ব্যাংকের লাইসেন্স দেবে। সেই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডের সভায় গত ১৫ মার্চ নতুন ব্যাংকের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। আবার এসব কারণে সংখ্যাও বাড়াতে হচ্ছে।
একই কারণে গত ২৭ মার্চ পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক বসার কথা ছিলো। কিন্তু তার দুইদিন আগে ২৫ মার্চ অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে ডেকে পাঠান। শেষ পর্যন্ত তারিখ পরিবর্তন করে ৪ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়।
সম্ভাব্য তালিকায় যারা
সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরের ‘ফার্মারস ব্যাংক’। তিনি ব্যাংকটির প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান। আরও আছে সরকারদলীয় সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ফজলে নূর তাপসের ‘মধুমতি ব্যাংক’। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম আছে জনৈক হুমায়ুন কবীরের। যুবলীগ নেতা মির্জা আজমের প্রস্তাবিত ‘দ্য পিপলস ব্যাংক’। বিবেচিত নতুন ব্যাংকের তালিকায় আছে ইউনিয়ন ব্যাংক, এর পেছনে রয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলে জানা গেছে। তবে ব্যাংকটির ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে শহীদুল আলম নামের এক ব্যক্তি। সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমান ও নসরুল হামিদের প্রস্তাবিত ব্যাংক হচ্ছে ‘মেঘনা ব্যাংক’। চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছে আশিকুর রহমান। ‘কটক বাংলা ব্যাংক’-এর জন্য আবেদন করেছে নিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমদ। তার সঙ্গে উদ্যোক্ত হিসেবে আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ‘সেলফ এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংক’ সম্ভাব্য তালিকাতে রয়েছে।
‘ক্ষুদ্র পুঁজি ব্যাংক’-এর জন্য প্রস্তাব করেছে হোসেনে আরা বেগমের বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলামের ব্যাংকের নাম ‘ফেডারেল ব্যাংক’। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সরকারদলীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম। ‘পিপলস ইসলামী ব্যাংক’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে তালিকায় আছে এক প্রবাসী আবুল কাশেম। সঙ্গে রয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ।
এছাড়া প্রাথমিক বাছাইয়ে যেসব ব্যাংকের নাম রয়েছে তাদের সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সম্পৃক্ত। ফলে সরকার রাজনৈতিক ভাবে চাপে রয়েছে।
এনআরবি ব্যাংক
প্রবাসি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের মালিকানায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য চারটি আবেদন জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সেখান থেকে বাছাইয়ে তিনটি আবেদন চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে তিনটি আবেদন জমা আছে, সেই তিনটি ব্যাংকেরও লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে। তবে দুই উদ্যোক্তাকে এক সঙ্গে নিয়ে দুটি এনআরবি ব্যাংকের বিষয়টিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আরেকটি সূত্র।