আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। এ উপজেলার বাসিন্দা টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ উপজেলায় দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য এ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামের কোনো প্রার্থীর নাম এখনও শোনা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য সদস্য প্রার্থীরা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মন জয় করতে নানা কৌশলে কাজ করছেন। তাছাড়া প্রার্থীরা ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
এদিকে, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলাম সমর্থিত সদস্য পদে প্রার্থীর নাম শোনা না গেলেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জেলায় ১৫টি সাধারণ ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫জন সাধারণ সদস্য ও ৫জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। সাধারণ ওয়ার্ডে ১জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে ১জন মহিলাসহ মোট ২০জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। ২১জনের জেলা পরিষদ গঠিত হবে বলে। জেলার অন্তর্ভুক্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। তাদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন।
মির্জাপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন এবং পাশ্ববর্তী সখিপুর উপজেলার ১টি ও বাসাইল উপজেলার ২টি ইউনিয়ন নিয়ে মির্জাপুর উপজেলায় ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত হয়েছে। জনসংখ্যা অনুপাতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ১৩২জন সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মির্জাপুর পৌরসসহ ৭টি ইউনিয়নের একজন মেয়রসহ ৭ চেয়ারম্যান, ৮৪জন সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান জেলা পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ভোট প্রয়োগ করবেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী, মহেড়া, ফতেপুর, ভাদগ্রাম, বানাইল, আনাইতারা, উয়ার্শী, লতিফপুর ও ভাওড়া ইউনিয়ন ছাড়াও বাসাইল উপজেলার হাবলা ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন রয়েছে।
এ ওয়ার্ডে সদস্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মীর ওয়াদুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক উয়ার্শী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ হেল সাফি, উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজীব, বানাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শামীম কবির ও মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আনিছুর রহমান হুমায়ুন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত মির্জাপুর পৌরসভা, বহুরিয়া, গোড়াই, আজগানা, বাঁশতৈল, তরফপুর ও পাশ্ববর্তী সখিপুর উপজেলা হাতিবন্ধা ইউনিয়ন রয়েছে। এ ওয়ার্ডে সদস্য পদে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মির্জাপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম ও উপজেলা মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিআরডিবি চারবারের চেয়ারম্যান মির্জাপুর কলেজের সাবেক ভিপি মীর শরীফ মাহমুদ গণসংযোগ করে চলেছেন।
এ দুই ওয়ার্ডে বাসাইল ও সখিপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সদস্য পদে কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না।
মির্জাপুর উপজেলার ১৫টি, নাগরপুর উপজেলার ১০টি, সখিপুর উপজেলার ১টি ও বাসাইল উপজেলার ২টি ইউনিয়নসহ মোট ২৮টি ইউনিয়ন নিয়ে সংরক্ষিত ২নম্বর ওয়ার্ড (৪,৫,৬) গঠন করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুক ও সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ড (৪,৫,৬) থেকে মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সালমা সালাম উর্মির নাম এককভাবে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা ততই নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজীব বলেন, ছাত্র জীবন থেকে দলের পক্ষে কাজ করে চলেছি। জেলা ও উপজেলার সিনিয়র নেতাদের সমর্থন নিয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা করে প্রত্যেক ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছি।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজীব বলেন, আমি জেলা ও উপজেলা আওয়ামী সিনিয়র নেতাদের সমর্থন নিয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছি এবং এই ওয়ার্ডের ১১টি ইউয়িনের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের কাছে গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছি।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য সদস্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি বলেন, দলের সমর্থন নিয়ে ২০০২ সালে মির্জাপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সুনামের সাথে ২০১০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি। তাছাড়া ১৯৭৩ থেকে ৭৯ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ৮০ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও ৮৫ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ জানান, দলের সকল শ্রেণির নেতাকর্মীরা তাকে প্রার্থী হতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তবে ফজলুর রহমান ফারুক, মির্জাপুরের এমপি একাব্বর হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোহায়েরুল ইসলামের দিক নির্দেশনা মতে দলের পক্ষে কাজ করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সদস্য পদে একাদিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে।