ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরীফকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখনো পুরো উপজেলাতেই গ্রেফতার আতঙ্ক রয়েছে।
হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া ছয় মামলায় অজ্ঞাত তিন সহস্রাধিক মানুষকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে এ পর্যন্ত ৮৫ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। গ্রেফতারদের মধ্যে অনেকেই নিরাপরাধ বলে স্বজনরা দাবি করলেও পুলিশ বলছে, হামলার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, হামলার ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলা সদরে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা টহলে রয়েছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম এখন প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যেই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে উপজেলা।
তাই ভয়ে মাঠে নামছেন না কৃষকরাও। পাশাপাশি বাইরের লোকজনও ভয়ে ধান কাটার কাজ করতে আসছেন না নাসিরনগরে। এর ফলে বোনা আমন ধান পেকে জমিতেই ঝরছে। চড়া মূল্য দিয়েও শ্রমিক না পাওয়ায় ৩-৪টি ফসলি মাঠের সহস্রাধিক বিঘা জমির ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নাসিরনগর উপজেলার মসলেন্দুপুর, কুলিকুন্ডা, গোকর্ণ, নূরপুর, লক্ষ্মীপুর, জেঠাগ্রাম, শ্রীঘরসহ উপজেলা সদরের বেশ কয়েকটি ফসলি মাঠের আমন ধান পেকে কাটার উপযুক্ত হয়ে গেছে আরও দুই সপ্তাহ আগেই। এখন এসব ধানের শীষগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ফলে শীষ থেকে ধান ঝরে পড়ছে জমিতেই। এতে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কায় ভুগছেন এখানকার দু`ফসল নির্ভর কৃষকরা।
নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, জমির ধান কাটার জন্য কোনো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আমার তিন ভাতিজাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন কেউই জমিতে কাজ করতে চাইছে না গ্রেফতারের ভয়ে।
শ্রীঘর গ্রামের বাসিন্দা মুখলেছ মিয়া বলেন, আগে দৈনিক দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা দিলেই শ্রমিকরা ধান কেটে দিয়ে যেতো। কিন্তু এখন পাঁচশ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রেফতার আতঙ্কে বাইরের এলাকা থেকে কোনো শ্রমিক নাসিরনগরে আসছেন না কাজ করতে। তাই বাধ্য হয়ে ঘরের লোকজনদের দিয়েই ধান কেটে নিয়ে এসেছি।
একই গ্রামের বাসিন্দা হাশেম মিয়া জাগো নিউজক বলেন, বাইরে থেকে ধান কাটার শ্রমিকরা এলাকায় আসছেন না। শ্রমিকরা ভাবছেন তারা নাসিরনগরে এলেই গ্রেফতার হতে পারেন। তাই ঘরের লোকজনদের দিয়েই জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে এসেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করছে না। উপজেলাজুড়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়েছে গ্রেফতার ভয়ে যারা গ্রাম থেকে পালিয়ে গেছেন তারা যেন গ্রামে ফিরে আসেন।
তাছাড়া গত তিনদিন ধরে পুলিশ কোনো গ্রেফতার অভিযান চালায়নি বলেও জানান তিনি।