বহুল প্রতীক্ষিত চবির সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধনের অপেক্ষা

বহুল প্রতীক্ষিত চবির সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধনের অপেক্ষা

cth-uniচট্টগ্রাম: শাটল ট্রেন, কাটা পাহাড়, বুদ্ধিজীবী চত্ত্বর, প্যাগোডা, কলা অনুষদের পশ্চিমে পাহাড়ি ঝর্ণা, ঝুপড়িতে গান আর আড্ডা, সবুজে ঘেরা প্রাণের ক্যাম্পাস। বর্ণনা শুনেই যে কেউ বলে দিতে পারেন এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র।  কারণ এমন বৈচিত্রপূর্ণ ক্যাম্পাস যে বাংলাদেশে আর কোথাও নেই।

ঘুম থেকে উঠে শাটল ধরার প্রাণান্ত চেষ্টা, শাটল ট্রেনে বেসুরো গান গেয়ে ঘাম ঝড়ানো, ট্রেন আর গানের শব্দে বন্ধুদের আড্ডা। নানা বিষয়ে কখনো তুমুল ঝগড়া। এরই মাঝে হারিয়ে যাওয়া যুগলের নিঃশব্দ চাহনি।

ভর্তি হয়ে দূরত্বের কারণে প্রথমে কেউ কেউ বিরক্ত হলেও খুব অল্প সময়ে সবুজের মায়ায় ঘেরা ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়ে যান শিক্ষার্থীরা। গান আর আড্ডার মধ্য দিয়ে শেষ হয় শিক্ষাজীবন।  প্রাণের ক্যাম্পাস ছাড়ার কথা মনে হলে চোখের কোণায় একফোটা অশ্রুবিন্দু জমে।  কিন্তু ছেড়ে যেতে হয়।  মনে করিয়ে দেয় বরীন্দ্রনাথের সেই কবিতার পংক্তি, ‘যেতে নাহি দেব … তবু যেতে দিতে হয়।’

প্রাণচঞ্চল শিক্ষাজীবন শেষে মাথার ওপর হাজারো দায়িত্ব। খুঁজে নিতে হয় জীবিকার সন্ধান। হয়তো মেলেও।  পরিবার আর অফিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া।  তবে চবির সেই প্রাণচাঞ্চল্য লেগেই থাকে।  প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্য মন কাঁদলেও সময় হয়ে ওঠে না যান্ত্রিক শহরের ব্যস্ত জীবনে।

মাত্র কয়েকটি বিভাগ নিয়ে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর যাত্রা শুরুর পর থেকে জ্ঞানরাজ্যে আলোকবর্তিকার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।  এখান থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করা কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ছড়িয়ে আছেন দেশে-বিদেশে।

পাহাড় ঘেরা, পাখির কলতান ভরা ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ণ করতে যাচ্ছে পথ চলার ৫০ বছর। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে আয়োজন করা হয়েছে সুবর্ণজয়ন্তীর। এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী আয়োজন। এ আয়োজনে অন্তত ৪০ হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিলিত হবেন।

শুক্রবার বিকেল তিনটায় নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে এর আনুষ্ঠানিকতা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিআরবির শিরীষতলায় শেষ হবে র‌্যালি।  এতে অংশগ্রহণ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ।

এদিকে সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেজেছে রঙ বে-রঙের আলোকসজ্জায়। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ।  এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে জিইসি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হবে ‘ওয়েলকাম নাইট’। সঙ্গে থাকবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন। এ আয়োজনে শুধুমাত্র প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন বলে জানা গেছে।  রাতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উপস্থিত থাকবেন দেশবরেণ্য শিল্পী রুনা লায়লা। এছাড়া চট্টগ্রামের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী পাল ও সন্দীপ আচার্য দর্শকদের মাতাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণ জয়ন্তীতে যোগ দিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ৫৫৮ জন। অন্যদিকে বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ২০ হাজার ২৯২ জন। এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীসহ প্রায় ৩৫ হাজারের বিশাল উপস্থিতি থাকবে এ মিলনমেলায়।  অনিবন্ধিত অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীও আয়োজনে অংশ নেবেন।

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চলবে সুবর্ণজয়ন্তীর মূল আয়োজন। সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন।  এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীণ শারমীন চৌধুরী।  সুবর্ণজয়ন্তী বক্তা হিসেবে থাকবেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

বাংলাদেশ