একটি খাতা ও ইতিহাসের কিছু নিদর্শন

একটি খাতা ও ইতিহাসের কিছু নিদর্শন

শেরপুর জেলা প্রশাসকের বাংলোর আসবাবপত্রের রেজিস্টার্ড খাতাটিতেই লিপিবদ্ধ ছিল সবকিছু। কিন্তু বাসভবন থেকে প্রায় 21দুইশ বছরের পুরনো তৎকালীন জমিদারদের নির্দশনের নানা পুরাকীর্তি ও তৈজসপত্রসহ রেজিস্টার্ড খাতাটিও উধাও হয়েছে। সরকারি এ বাসভবনের মালামালের রেজিস্টার্ড খাতাটি পাওয়া গেলেই সব জানা যাবে অনেক রহস্য।

সম্প্রতি বাংলোর পুরাকীর্তি ও তৈজসপত্র উধাওয়ের বিষয়টি ফাঁস হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কানাঘুষা চললেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না।

ধারণা করা হচ্ছে, যিনি বা যারা এসব প্রাচীন নিদর্শন সরিয়েছেন তারাই রেজিস্টার খাতাটি গায়েব করেছেন। ঘটনাটি তদন্তের দাবি উঠেছে সচেতন মহল থেকে।

তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক ডা. এ এম পারভেজ রহিম এ বিষয়ে কোনো রকম মন্তব্য না করে বলেছেন, তিনি আসার পর ওই বাংলোর মালামালের কোনো রেজিস্টার্ড খাতা পাননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে শেরপুর জেলা ঘোষণা হওয়ার পর প্রায় দুইশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শেরপুর পৌরসভার আড়াইআনি জমিদার বাড়িতে জেলা প্রশাসকের বাসভবন তৈরি করা হয়। এর আগে ১৯৩৭ সালের তৎকালীন ওই জমিদার বাড়িতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সিও) এবং এর পরবর্তিতে এসডিওর (মহকুমা প্রশাসক) বাসভবন ছিল। পরে শেরপুর জেলার জেলা প্রশাসকের বাসভবন নির্মাণ করা হয় সেখানে।

ওই বাসভবনে জমিদার আমলে রেখে যাওয়া মূল্যবান বেশ কিছু আসবাবপত্রসহ নিদর্শনের পুরাকীর্তি ও তৈজসপত্র সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৮০ বছর ধরে জমিদার আমলের উল্লেখিত নিদর্শনগুলো সংরক্ষিত হয়ে আসার একপর্যায়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশকিছু নিদর্শন হাওয়া হয়ে যায়।

বর্তমান জেলা প্রশাসনসহ জেলার বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। জেলা প্রশাসকের বাংলোতে বিভিন্ন সময়ে চাকুরিরত কর্মচারীরাও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

তবে কিছু আসবাবপত্র বিভিন্ন সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা গোডাউনে পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা হয়। নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব আসবাবপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি শ্বেতপাথরের ডাইনিং টেবিল বাংলোর সংস্কার কাজ করার সময় ভেঙে যায় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলোর এক কর্মচারী জানান।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, গত ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে তৎকালীন জমিদার আমলের মূল্যবান পুরাকীর্তি, তৈজসপত্র ও আসবাবপত্রগুলো সরানো হয়েছে। কে, কখন, কোথায়, কিভাবে এসব পুরাকীর্তি সরালো সে ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছে না।

তবে যিনিই এগুলো সরিয়েছেন তিনিই হয়তো রেজিস্টার্ড খাতাসহ পূরাকীর্তি গায়েব করে দিয়েছেন এমন ধারণা জেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকতা-কর্মচারীর।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, কেবল জমিদার আমলের প্রাচীন নিদর্শনই নয়, সরকারি টাকায় কেনা বেশ কিছু আসবাপত্রও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি এ বাসভবনের মালামালের রেজিস্টার্ড খাতাটি পাওয়া গেলেই সব প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে।

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অর্থের মূল্যের হিসেবে উল্লিখত পুরাকীর্তি ও তৈজসপত্রগুলোর দাম নিরূপন না করা গেলেও এগুলো প্রচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। প্রায় দেড়-দুইশ বছর আগের জমিদারদের ব্যবহৃত জিনিসগুলো জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সৌন্দর্য ও অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দিত।

এগুলো অতীতে জেলা প্রশাসকের বাসার বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানের ছবিতে এখনও দেখা যায়। তবে হঠাৎ করে এ প্রাচীন নিদর্শনগুলোর উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার এবং যে বা যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।

জেলা সংবাদ