শিল্পী গড়ার এক মহান কারিগর ছিলেন প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্ত। তার হাত ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে আগমন ঘটেছিল কবরী, সুচন্দা, উজ্জ্বল, শর্মিলী আহমেদ, ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফের মতো জাঁদরেল শিল্পীদের। চলচ্চিত্রের কিংবদন্তিতুল্য এই মানুষটির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (বুধবার)। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শৈশবে নাটকে অভিনয় এবং নাট্যনির্দেশনা দিলেও সুভাষ দত্তের পেশাগত জীবন শুরু হয় একজন কমার্শিয়াল শিল্পী হিসেবে। ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেখে তিনি ছবি নির্মাণে দারুণভাবে আগ্রহী হন। চলতে থাকে প্রস্তুতি। এর মধ্যে এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিটিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। সেটা কমেডিয়ান চরিত্রে। এর পর কেটে যায় কয়েকটি বছর। ১৯৬২ সালের শেষ দিকে এসে হঠাৎ তার মনে হয় তিনি তো অভিনয় করতে আসেননি।
শচীন ভৌমিকের একটি গল্পের চিত্রনাট্য সৈয়দ শামসুল হককে দেখালেন। তিনি বললেন সব ঠিক আছে। এরপর সত্য সাহার সঙ্গে তার কথা হলো। তিনিই চট্টগ্রামের একটি মেয়ের কথা বললেন। নায়িকা নির্বাচিত হলো। ছবিও শেষ। মুক্তি পেলো ‘সুতরাং’ ১৯৬৪ সালের ২৩ এপ্রিলে। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী আর চট্টগ্রামে চারটি প্রিন্ট দিলেন। ছবি সুপারহিট। হিট এই ছবির নায়িকা কবরীও।
সুভাষ দত্তের নির্দেশনায় প্রথম ছবি ছিল ‘সুতরাং’। এই ছবিরই নায়িকা ছিলেন কবরী। কবরী যখন প্রথমবার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তখন তার ছবিতে সুভাষ দত্তকে অভিনয় করতে বলেন। ছবির নাম ‘আয়না’। ছবিটি ২০০৬ সালে নির্মাণ হয়েছিল। এরপর কোনো ছবিতে তাকে কাজ করতে দেখা যায়নি। ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ ছবির জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুভাষ দত্ত। এরপর ১৯৯৯ সালে একুশে পদকও অর্জন করেন তিনি।
সুভাষ দত্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো রাজধানীর বুকে, সূর্যস্নান, চান্দা, তালাশ, নতুন সুর, রূপবান, মিলন, নদী ও নারী, ভাইয়া, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, ক্যায়সে কাহু, আখেরি স্টেশন, সোনার কাজল, দুই দিগন্ত, সমাধান প্রভৃতি।
তার নির্দেশিত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুতরাং, কাগজের নৌকা, আয়না ও অবশিষ্ট, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, আবির্ভাব, বলাকা মন, সবুজ সাথী, বসুন্ধরা, সকাল সন্ধ্যা, ডুমুরের ফুল, নাজমা, স্বামী-স্ত্রী, আবদার, আগমন, শর্ত, সহধর্মিণী, সোহাগ মিলন, পালাবদল, আলিঙ্গন, বিনিময়, আকাঙক্ষা, আমার ছেলে ইত্যাদি।