ফের রোগীর স্বজনদের পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের ১৬ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত রোববার মৃতের দুই ছেলেকে পিটিয়ে পুলিশে দেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের মারপিটে আহতরা হলেন- সাদ্দাম হোসেন (২৪) ও তার বন্ধু নাহিদ হাসান (২৪)। বর্তমানে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন তারা।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, রক্ত স্বল্পতাজনিত অসুখ নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন নাটোর সদর উপজেলার তানপুর গ্রামের জয়নাল হোসেন (৭০)। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন তার ওই দুই স্বজন। কিন্তু ভর্তির পর তখনও চিকিৎসা শুরু হয়নি রোগীর।
এ নিয়ে ওই দুজন দায়িত্বরত চিকিৎসক ফরিদ আহমেদ ও ইন্টার্ন চিকিৎসক কেএম সালাহউদ্দিন অভির সঙ্গে কথা বলতে যান রোগীর স্বজনরা। তারা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুললেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই দুই চিকিৎসক।
পরে একদল ইন্টার্ন চিকিৎসক ওই দুজনকে পাশের একটি ঘরে আটকে রেখে বেদম মারধর করেন। খবর পেয়ে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ সেখানে গেলে তাদের পুলিশে দেয় চিকিৎসকরা। তার আগে হাসপাতাল বক্স পুলিশ সদস্যরা ওই ওয়ার্ডে গেলে তাদের উপর চড়াও হন চিকিৎসকরা।
দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকায় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এএফএম রুফিকুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. তৌফিকুল ইসলাম মো. বেলাল বলেন, রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের উপর চড়াও হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন।
দিন দিন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এমন আচরণ বেড়ে যাওয়ায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি উপ-পরিচালক। তিনি বলেন, কথায় কথায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘটে যাচ্ছেন। ফলে চাইলেও তারা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারছেন না। এ ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে পরিচালক এ ঘটনায় আইনত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
অন্যদিকে, রাজপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ওই দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।
এদিকে রামেক হাসপাতালে প্রায়ই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে রোগীর স্বজনদের লাঞ্ছিত হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন রাজশাহীবাসী। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ দৌরাত্ব বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলনের কথা জানিয়েছে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ কারণে তারা রোগী ও স্বজনদের কাছে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এর আগে রোববার দুপুরে রামেক হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসকের অবহেলায় মহসিন আলী নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। এর জের ধরে স্বজনরা প্রতিবাদ করলে ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং রামেক ছাত্রলীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু ও রায়হানের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর অপু এবং তার ক্যাডাররা রোগীর স্বজন আনারুল ও রফিকুল ইসলাম বাবুকে পিটিয়ে জখম করে। এরপর দুজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যদিও পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।