রাজশাহী: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার মধ্য দিয়ে রাজশাহীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আজকে সবার মুখ থেকে এই সম্প্রীতি রক্ষার কথাটি জানতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি।”
শনিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে রাজশাহী বিভাগের জনগণের সঙ্গে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে সবার কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজের এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলার জনগণের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে এ ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি করা প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আপনাদের কাছ থেকে কথা শুনে আমি খুবই আশান্বিত যে, রাজশাহীর মতো একটি জেলায়, যেখানে এতো সমস্যা ছিল, সেখানে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। সবার মধ্যে নতুন করে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়েছে। শুরু হয়েছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য কাজ করবেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেছি। তা যেন আরও ত্বরান্বিত করতে পারি, সেজন্য ভবিষ্যতে আপনাদের আরও সহযোগিতা চাই। আমরা চাই বাংলাদেশ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সেই সম্প্রীতির জন্য দেশ উন্নত হবে এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।”
কোনো কোনো মহল চেষ্টা করছে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে- অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের যে অধিকার তা যেনো প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মৌলিক অধিকার যেনো সুনিশ্চত হয়।
“অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যে উন্নয়ন করতে পেরেছি তা সকলের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই করতে পেরেছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বলে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ আমরা নির্বাচিত হতে পেরেছি বলেই উন্নয়ের ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এভাবে সহযোগিতা করলে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো। আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো, তখন বাংলাদেশ হবে একটি সুখি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর বাংলদেশ।”
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. ফেরদৌস নিলুফারের বক্তব্যের শেষ অংশের এক প্রত্যাশার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষ সুস্থ থাকলে সেটাই বড় অ্যাওয়ার্ড। আমার দেশের মানুষ সুস্থ থাকবে এটাইতো আমার জন্য বড় পুরস্কার। অন্য কোনো পুরস্কার আমার দরকার নাই।”
এর আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. ফেরদৌস নিলুফার প্রধানমন্ত্রীর ‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ স্লোগানটি উল্লেখ করে বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা মাঠ পর্যায়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা পোলিও নির্মূল করেছি। আমরা টিটেনাস নির্মূল করেছি। আমরা অতি সম্প্রতি ডাব্লিউএইচও’র সর্টিফিকেটও পেয়েছি।
রাজশাহী সিভিল সার্জন বলেন, “আগামীতে আপনার নির্দেশনায় আমরা দেশে যেসব সংক্রামক রোগ আছে সবগুলোই নির্মূল করবো। স্বাস্থ্য বিভাগের কাজকর্ম আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কাজের জন্য ভবিষ্যতে আপনার হাতে আরও অ্যাওয়ার্ড আসুক এই আমাদের সবার প্রত্যাশা।”
রাজশাহী সিভিল সার্জন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান, মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও একজন ধর্মযাজকের কথা শোনেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন। ভিডিও কনফারেন্সস্থলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকসহ অন্যান্য সংসসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক, ইমাম, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।