নতুন ঠিকানার খোঁজে বিজিএমইএ ভবনের ক্রেতা-ভাড়াটিয়ারা

নতুন ঠিকানার খোঁজে বিজিএমইএ ভবনের ক্রেতা-ভাড়াটিয়ারা

bgmeaঢাকা: গত ৮ নভেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই বিজিএমইএ ( বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি) ভবনের ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গার ক্রেতা-ভাড়াটিয়ারা নতুন জায়গা খোঁজার উদ্দেশ্যে উঠে পড়ে লেগেছেন। পাশাপাশি পাওনা আদায়ে তারা পরিচালক পর্ষদকেও চাপ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ সূত্র।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ১৪ তলা বিজিএমইএ ভবনের মোট ব্যবহার যোগ্য জায়গা আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার বর্গফুট। এর  মধ্যে বিজিএমইএ ব্যবহার করছে ১ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গা। বাকি ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা বিক্রি ও ভাড়া দেয়া হয় ৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে।

তবে আদালতের রায় অনুযায়ী ক্রেতারা যে টাকা দিয়ে ভবনে জায়গা কিনেছিলেন তা ফেরত দিতে হবে বিজিএমইএ‘কে।

ক্রেতাদের অর্থ ও ভাড়াটিয়াদের দেয়া অ্যাডভান্স বাবদ এসব কোম্পানির বিজিএমইএ’র  কাছে পাওনা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। কিন্তু ভবন ভেঙে ফেলা হবে তাই নতুন জায়গায় খুঁজছেন এসব ক্রেতা ও ভাড়াটিয়ারা।

ক্রয় সূত্রে বিজিএমইএ ভবনের একটি অংশের মালিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর মূল কেন্দ্র ধরতে গেলে কারওয়ান বাজার এলাকা। এই এলাকায় জায়গা পাওয়া সহজ কথা না। বিজিএমইএ ভবন যখন হয় তখন আমার প্রতিষ্ঠান এই ভবনে একটি অংশ কিনে নেয়। এত দিন বিজিএমইএ এর নেতারা আমাদের বলেছেন, এই ভবন কিছুতেই ভাঙা হবে না। কিন্তু এখনতো আপিলও খারিজ করে দেয়া হয়েছে তার ওপর রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপিও প্রকাশ করা হয়েছে। কিছুতেই আর এই ভবন বাঁচানো যাবে না। কিন্তু তাই বলে তো আমাদের ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। তাই আমরা আশেপাশেই জায়গা খুঁজছি। আমরা আমাদের পাওনাদি পরিশোধ করে দেয়ার জন্য বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করছি কিন্তু তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না।

অন্যদিকে বিজিএমইএ উত্তরায় নয় কাঠা জায়গা চাচ্ছে সরকারের কাছে। তাও মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে আছে বলে জানান বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য।

বিজিএমইএ এর পরিচালনা পর্ষদের ওই সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, উত্তরার নয় নম্বর সেক্টরে একটি প্লট আমরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চেয়েছি। এ বিষয়ে সরকারও ইতিবাচক। তবে এখনো চূড়ান্ত কথা হয়নি। সরকারের কাছ থেকে চূড়ান্তভাবে জায়গাটি পেলেই আমরা নতুন ভবনের কাজ শুরু করবো।

তবে এসব বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ বিজিএমইএ এর নেতৃবৃন্দ। বিজিএমইএ এর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানের সাথে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে আমরা এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করবো না।

উল্লেখ্য স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের রায়ে ২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল আইন লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ১৮ তলা বিজিএমইএ ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ।

ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের জমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দেন আদালত।

পাশাপাশি বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদেরকে টাকা ফেরত দিতেও বলেন হাইকোর্ট।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ।

সোনারগাঁও হোটেলের পাশে রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে সরকারের অধিগ্রহণ করা প্রায় ৬ দশমিক ২১ একর জমিটি ১৯৯৮ সালে কেবলমাত্র একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে দেয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ১৮ তলার বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এরপর থেকে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে।

অন্যান্য