আরও ৬টি ব্লক পেতে সরকারের কাছে কনোকো ফিলিপসের চিঠি

আরও ৬টি ব্লক পেতে সরকারের কাছে কনোকো ফিলিপসের চিঠি

সমুদ্রে তেল- গ্যাস অনুসন্ধানে আরও ৬টি ব্লক পেতে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি কনোকো ফিলিপস। দীর্ঘদিন ধরেই তারা ব্লকগুলো পেতে সরকারি পর্যায়ে নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে জটিলতার কারণে সরকার কোম্পানিটিকে মাত্র ২টি ব্লক দিয়েছে।

মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তির পর কনোকো ফিলিপস আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। কোম্পানিটি গত ২৭ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলায় চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

‘কনোকো তাদের আবেদনে ১২,১৫,১৬,১৭ ২০ ও ২১ নম্বর ব্লক চেয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।’

কনোকো ফিলিপস এর আগে পাওয়া ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে জরিপ কাজ শেষ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে দেড় কিলোমিটার গভীর এই ব্লক দু’টির মোট দুই হাজার ৬শ বর্গকিলোমিটার এলাকায় এই জরিপ কাজ পরিচালনা করেছে বলে দাবি করেছে কনোকোর একটি সূত্র।

‘কনোকোর ওই চিঠিতে জানতে চেয়েছে, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পরে এই ৬টি ব্লকের কি অবস্থা, বাংলাদেশের ভাগে কয়টি ব্লক পড়লো।’

চিঠিতে কনোকো যেহেতু ৮টি ব্লকের জন্য মনোনীত হয়েছিল ফলে বাকী ৬টি ব্লক কোন সমস্যা না থাকলে সরাসরি কনোকোকে বরাদ্দ দেয়া যায় কিনা তা ভাবার অনুরোধ জানানো হয়।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মোহাম্মদ ইমাদুদ্দিন বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি। কনোকো জানতে চেয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় তারা যে ৮টি ব্লকের জন্য মনোনীত হয়েছে সে ব্লকগুলোর কি অবস্থা।

পাশাপাপাশি তারা যেহেতু নির্বাচিত হয়েছিল, সেকারণে বাকী ব্লকগুলো তাদের দেয়া যায় কিনা জানতে চেয়েছে।

১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের দ্বি-মাত্রিক জরিপ প্রসঙ্গে ইমাদুদ্দিন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী তারা জরিপ করেছে। এখন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে আরো তিন কিছু সময় লাগতে পারে।

উল্লেখ্য ‘১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে যখন গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। তখন ৭টি কোম্পানি দরপত্রে অংশ নেয়।’

‘মূল্যায়ন কমিটি আমেরিকান কোম্পানি কনোকো ফিলিপসকে ১০, ১১, ১২, ১৫, ১৬, ১৭, ২০ এবং ২১ নম্বর ব্লকে (মোট ৮টি) কাজ দেওয়ার সুপারিশ করে।

কিন্তু সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ থাকায় শুধুমাত্র ১০ ও ১১ ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য পিএসসি স্বাক্ষরের অনুমোদন দেয় একনেক (২৪ আগস্ট ২০০৯)। ২০১১ সালের ১৬ জুন কনোকোর সঙ্গে চুক্তি সই করে পেট্রোবাংলা।

কনোকোকে নতুন ৬টি ব্লক ইজারা দিতে একটি মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। সাগরের ব্লক ইজারা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়, দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এই কাজের জন্য যোগ্য নয় এবং বিশাল ব্যয় সাপেক্ষ। যা বাংলাদেশের বিনিয়োগ করার সামর্থ নেই।

বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুরোপুরি সত্য নয়। কনোকো কাজ পাওয়ার পর চীনের বর্ডার গেটওয়ে প্রটোকলকে (বিজিপি) দিয়ে জরিপ কাজ করে নিয়েছে। এই সুপারভাইজিং রোল বাপেক্সও করতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দিতে পারলে অনেকের বিশেষ স্বার্থ হাসিল হয়। যা বাপেক্সকে দিলে সম্ভব নয়। যে কারণে অনেকে বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, সাগরে না হলেও নিঝুমদ্বীপ, চরকুকরি মুকরি, মহেশখালীসহ সাগরে যেসব দ্বীপ রয়েছে এগুলোতে টুডি সার্ভে অনায়াসে করতে পারে বাপেক্স। যাতে করে ধারণা পাওয়া যাবে ওইসব অঞ্চলের ভূ-কাঠামো ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কে।

‘টুডি সার্ভে শেষে পরবর্তী অবস্থানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তখন ইজারা দিলেও ভালো শর্তে দেওয়া যাবে বলেও দাবি করেন বাপেক্স এমডি।’

ভোলার শাহবাজপুরে উল্লেখ করার মতো গ্যাস আবিষ্কার হওয়া ওই অঞ্চলে আরো গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি বলেও জানান তিনি।

‘পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর জানান, আমরা এখনও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপি পাইনি। রায়ের কপি পাওয়া গেলেই সাগরের গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ শুরু করা হবে।

কি ভাবে এগিয়ে যাওয়া হবে সে বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।

‘কনোকো ফিলিপস এর আবেদন প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করতে চান নি তিনি।’

অর্থ বাণিজ্য