ঢাকা: রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় সরকারকে বাড়তি অস্বস্তিতে পড়তে হবে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরে সরকারের একটি প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, হিলারির বিজয়ের জন্য ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সহযোগিতারও অভিযোগ রয়েছে। সেদিক দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে অনেকটাই স্বস্তি অনুভব করছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা।
হিলারি ক্লিনটন যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের প্রতি তার সে সময়ের কিছু ভূমিকার কথা উল্লেখ করে দলের নেতারা বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, এটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য কোনো সমস্যা না। কিন্তু হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমাদের সরকারের জন্য হয়তো কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হতে পারতো’।
‘দেশের একটি রাজনৈতিক মতাদর্শিক গোষ্ঠী ও সমর্থকদের হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, যে গোষ্ঠীটি সরাসরি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী। তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন এই গোষ্ঠীটি হিলারিকে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে প্রভাবিত করে। তার কিছু ভূমিকা সরাসরি সরকার ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যায়। বিশেষ করে, পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক হিলারির কারণেই অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়’।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ট্রাম্পের বিজয়কে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তার এ বিজয় আমাদের সরকারের জন্য কোনো সমস্যা নয় বলেই মনে করি। এর কারণ লুকানোর কিছু নেই। সবাই জানেন, হিলারি ক্লিনটন আমাদের পদ্মাসেতু নির্মাণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন ড. ইউনূসের কারণে। হিলারি ক্লিনটনের জন্য ড. ইউনূসের খুব শক্ত লবিংও ছিলো। সে হিসেবে ট্রাম্প আসাতে ভালোই হলো’।
‘তিনি একটি নতুন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে, ওপেন মাইন্ড নিয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকাবেন। আর ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিপক্ষে। শেখ হাসিনা বলেছেন, মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, ট্রাম্পও বলেছেন, জিরো টলারেন্স’।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরের সময়ও তার সঙ্গে সরকারের নানা বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। সরকারের বিরোধী ওই বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি তার প্রভাবও তখন প্রকাশ পায়। হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ওই গোষ্ঠীটি আবারও তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাতে পারতো, যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিক থেকে হিলারিকে নিয়ে উৎসাহের ইঙ্গিতও আগে থেকেই প্রকাশ পেয়েছিলো। হিলারি নির্বাচিত হলে ওই গোষ্ঠীর প্রতি তার একটি ইতিবাচক দৃষ্টি তৈরি হবে বলেও গুঞ্জন তোলা হয়েছিলো।
সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের যে পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে, সে অনুসারেই বাংলাদশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক অগ্রসর হবে। তাই ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় সরকারকে বাড়তি কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে না বলেই মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।