আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে একটা প্রশ্নই ঘুরে-ফিরে আসছে -পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবেন? হিলারি নাকি ট্রাম্প? এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন হিলারি। শুধু জরিপেই নয় বরং এনবিসির ব্যাটেলগ্রাউন্ড মানচিত্রও বলছে, এগিয়ে আছেন হিলারি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্লিনটনের কলামে ২৭৪টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে; যা গত সপ্তাহ থেকে অপরিবর্তিত আছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের চেয়ে বেশি পেয়েছেন। গত সপ্তাহে এনবিসির ওই মানচিত্রে ট্রাম্পের কলামে ১৮০ ইলেকটোরাল ভোট থাকলেও বর্তমানে তা কমে ১৭০ হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে এনবিসি নিউজ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত জরিপে বলা হয়, তীব্র লড়াই হতে যাচ্ছে দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে। ওই জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী হিলারি।
তবে জনমত জরিপ বা ব্যাটেলগ্রাউন্ড মানচিত্রে হিলারি এগিয়ে থাকলেও পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাবনাও কেউ উড়িয়ে দিতে পারছেন না। হিলারি ক্লিনটন মার্কিন নির্বাচনে অনেক পুরনো মুখ। সে তুলনায় ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু রিপাবলিকান দল থেকে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে, কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প? কীভাবেই বা মার্কিন রাজনীতিতে এলেন তিনি। চলুন তাহলে জেনে নেই ট্রাম্প সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউইয়র্কের কুইন্স সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প (১৯০৫-১৯৯৯) ছিলেন একজন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী।পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ট্রাম্প ছিলেন চতুর্থ।
বাবার অনুপ্রেরণায় রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হোয়ারটন স্কুলে পড়ার সময় বাবার এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি বাবার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি একজন ধনকুবের ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত।
২০১৫ সালের জুনের ১৬ তারিখে রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন পান ট্রাম্প। রিপাবলিকান দল থেকে যে ক’জন মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান ট্রাম্প। আর তারপর থেকেই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হতে শুরু করে।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই নানা ইস্যুতে বিতর্ক তৈরি করেন ধনকুবের ব্যবসায়ী ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, অভিবাসী ইস্যু, মুসলমানদের প্রতি বিরূপ মনোভাব ইত্যাদি নানা ইস্যুতে ট্রাম্পের বক্তব্য তাকে বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক করে তুলেছে।
প্রথম থেকেই মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ আর ঘৃণা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি তার দেশে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করবেন। অর্থাৎ তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে এটা বর্ণবিদ্বেষকে আরো উসকে দেবে।
ট্রাম্প এও বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে প্রাচীর গড়বেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আরো সৈন্য মোতায়েন করে রাশিয়াকে ওই অঞ্চলে আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। তার এই ঘোষণার ফলে রাশিয়া এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার সখ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চরিত্র নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি করেছেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১১ নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। নানা ধরনের কেলেঙ্কারির অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে।
এই ধনকুবের ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ারও অভিযোগ এসেছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজেকে দেওলিয়া দেখিয়ে কর ফাঁকি দিচ্ছেন।
নানা সময় বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা, নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন এবং তার স্বামী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ রিপাবলিকান দলের বহু প্রার্থীকে নিয়েও কটু মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প মানেই যেন এক বিতর্ক।