মানুষ প্রকৃতির সন্তান। অথচ এই প্রকৃতিকেই আমরা নানাভাবে দূষিত করে চলেছি। আমাদের আগামী প্রজন্মকে প্রকৃতির অপরূপ মমতা থেকে করছি বঞ্চিত। এ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের নানা উপাদান এবং এদের গুরুত্ব সম্পর্কে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ৩১ মার্চ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সিলোন গোল্ড চ্যানেল আই প্রকৃতি মেলা-২০১২’।
এদিন সকাল ১১টায় বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ দেশী ও বিদেশী বিশিষ্টজনদের নিয়ে টিয়া পাখি অবমুক্ত করার মাধ্যমে প্রকৃতি মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, পরিবেশ ধংস ও সমুদ্রের ভুপৃষ্ঠ যেভাবে দিন দিন জেগে উঠছে তার ফলে পৃথিবীর মানুষ ও পরিবেশ মহা ধংসের দিকে যাচ্ছে। আমাদের সবাই মিলে প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় চ্যানেল আই যে উদ্যোগ নিয়েছে সত্যিই তারা প্রসংশার দাবিদার।
প্রকৃত মেলা উদ্বোধনের সময় Ôআহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে… ` গানটি ছোট্ট সোনামণিরা পরিবেশন করে নৃত্যের মাধ্যমে। মেলায় স্থান পেয়েছিল হাজারও প্রজাতির উদ্ভিদ, পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন প্রযুক্তি, কুটির শিল্পজাত পণ্যের পসরা। প্রবীন চিত্রশিল্পীদের পাশাপাশি প্রকৃতি নিয়ে ছোট্ট বন্ধুদের চিত্রাংকনে ছিল মনমুগ্ধকর দৃশ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অষ্টেলিয়া থেকে আগত মি. পল, প্রকৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী, আসমা আব্বাসী, সাংবাদিক জগলুল হায়দার চৌধুরী, নাঈমুল ইসলাম খান ও সাইফুল আলম, ভাষ্যকার আবদুল হামিদ, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, বীরেন সোম ও রেজাউন নবী, গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, পরিবেশন ও অর্থনীতিবীদ কাজী খলিকুজ্জামান, পরিবেশবীদ ইনামুল হক, রাকিব উদ্দিন, জুনায়েদ কবীর, ইশতিয়াক সোবহান, ড. রেজাউল কমির ও মোস্তফা আহমেদ মোর্শেদ, প্রজাপতি বিশেজ্ঞ মনোয়ার হোসেন, চিড়িয়া খানার পক্ষে এবিএম শহীদুল¬াহ, বাংলাদেশ প্রাণী বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড. আবুল বাশার ও সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হান্নান খান, নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান, সঙ্গীতশিল্পী রেবেকা সুলতানা, রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী প্রমুখ।
ফরিদুর রেজা সাগর উদ্বোধনী বক্তেব্যে বলেন, চ্যানেল আই ধারাবাহিভাবে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করছে। এবার প্রকৃতিকে নিয়ে আমরা যে মেলা করেছি তার মাধ্যমে সত্যিই আমরা একটি ‘প্রকৃত মেলা’ করছি। মুকিত মজুমদার বাবু বলেন- আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। এই মেলাটি ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছরই হবে। আমরা চেষ্টা করবো মেলাটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির উপর যে প্রভাব পড়ছে আমাদের এ আয়োজনের মাধ্যমে সকল প্রজন্মের জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ৩১ মার্চ মেলাটির আয়োজন করার কারণ এদিনটি বিশ্ব আর্থ আওয়ার ডে। দিনটি পালনে এদিন ১ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখবে সারাবিশ্ব।
প্রকৃতি মেলায় বিভিন্ন পরিবেশনার মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ ছিল নানা-নাতির গম্ভীরা এবং বটবৃক্ষ, পেচাঁ ও বাঘ মামার পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ কৌশল অবলম্বনের পরিবেশনা।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রকৃতি মেলা’১২ সম্মাননা পেয়েছে বাংলাদেশ প্রাণী বিজ্ঞান সমিতি। ফরিদুর রেজা সাগর ও মুকিত মুজুমদার সমিতির সভাপতি ড. আবুল বাশার ও সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হান্নান খানের হাতে পদক তুলে দেন। সম্মাননা পেয়ে ড. আবুল বাশার ও মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন- প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে চ্যানেল আই-এর অভূতপূর্ণ আয়োজন চমৎকার। তাদের ধন্যবাদ আমাদের সংগঠনকে সম্মাননার জন্য নির্বাচিত করায়।
মেলায় বিভিন্ন সময়ে প্রকৃতি বিষয়ক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রেমোহন রাজবংশী, ফেরদৌস ওয়াহিদ, মনির খান, অনিমা রায়, সফিউল আল রাজা, পার্বত্য অঞ্চলের শিল্পী সভ্যতা, বাউল দেলায়ার ও সনিয়া, বিপ¬ব, সেরাকণ্ঠ ইমরান প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন সঙ্গীত একাডেমির শিল্পীরা দিনব্যাপি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। আরো পরিবেশিত হয় প্রকৃতি বিষয়ক আবৃত্তি, পুতুল নাচ, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সাক্ষাৎকার, নৃত্য পরিবেশন ইত্যাদি।
প্রকৃতি মেলা ২০১২ বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই। এটি উপস্থাপনা করেছেন ফরহাদুর রেজা প্রবাল, অপু মাহফুজ ও মৌসুমী বড়–য়া। পরিচালনা করেছেন আমীরুল ইসলাম ও শহিদুল আলম সাচ্চু।
মেলার শেষপর্বে বরেণ্য শিল্পীদের আঁকা ছবিগুলো প্রকৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর হাতে তুলে দেন শিল্পীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য মি. জর্জ নিউল ও ঢাবির প্রফেসর ড. নুরজাহান সরকার। মেলায় প্রকৃতি বিষয়ক চিত্রাংকনের জন্য শিশুদের ক ও খ গ্র“পে নির্বাচিত করে সনদ তুলে দেন প্রফেসর আইনুল নিশাদ, লায়লা হাসান ও মেলায় অংশ নেয়া বরেণ্য শিল্পীরা।