প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ১২ দিনের সরকারি সফরের লক্ষ্যে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসস’কে জানান, ‘ফিফথ রিপ্লেনিসমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’-এ যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম চারদিন কানাডা সফর করবেন। এরপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর কানাডার কুইবেকের মন্ট্রিলে ‘জিএফ’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, ‘জিএফ’-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সম্মেলনে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের তিনটি সবচেয়ে ক্ষতিকারক ও দূরারোগ্য ব্যাধি- এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঠেকাতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এর একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও সফরসঙ্গীরা লন্ডনের উদ্দেশ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন।
একই দিন লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ০৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছাবে। ব্রিটেনের রাজধানীতে সারারাত যাত্রা বিরতির পর ১৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ০৫ মিনিটে ফ্লাইটটি লন্ডন থেকে কানাডার মন্ট্রিলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একইদিন প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি মন্ট্রিলের স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে মন্ট্রিলের পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করবে।
সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাবেন কানাডার কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মন্ত্রী এবং অটোয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রাসহকারে মন্ট্রিলের হোটেল ওমনি মন্ট-রয়্যাল-এ নিয়ে যাওয়া হবে এবং কানাডা সফরকালে তিনি সেখানে অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিলের হায়াত রিজেন্সিতে অনুষ্ঠেয় এই রিপ্লেনিসমেন্ট সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন।
পরে বিকেলে তিনি একই হোটেলে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনের মিনিস্ট্রিয়াল প্লেজিং মোমেন্ট ও আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাায়াত রিজেন্সি মন্ট্রিলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।
১৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব তহবিলের নির্বাহী পরিচালক মার্ক দাইবালের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনে যোগ দেবেন।
একই দিনে তিনি ‘রিমোভিং বেরিয়ার্স টু হেল্্থ থ্রো এম্পাওয়ারিং উইমেন এন্ড গার্লস এন্ড রিচিং দ্য মোস্ট মার্জিনালাইজড’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-১ এবং ‘এনগেজিং এন্ড মোবিলাইজিং ইয়ুথ টু মিট দ্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল্্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-২-এ অংশ নেবেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠেয় আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে তিনি অংশ নেবেন।
তিনি পরে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগদান করবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন।
তিনি অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বিশ্ব তহবিল ও গ্লোবাল সিটিজেন আয়োজিত কনসার্টেও অংশ নেবেন।
১৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে (মন্ট্রিল সময়) এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে মন্ট্রিল ত্যাগ করবেন।
এই ফ্লাইটটি নিউইয়র্কের লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরে বিকেল ৩টায় (নিউইয়র্ক সময়) পৌঁছার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে একটি মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিউইয়র্কের হোটেল ওয়াল্ডোর্প অস্টোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি এ হোটেলেই থাকবেন।
শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের ওপর সাধারণ পরিষদের উচ্চপযার্য়ের প্লিনারি বৈঠকে ভাষণ দেবেন। তিনি ৫ ‘গ্লোবাল কমপেক্ট ফর সেফ, রেগুলার এন্ড ওর্ডালী মাইগ্রেশন : টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক এজেন্ডা-২০৩০ এবং অভিবাসীদের মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা অর্জন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বিষয়ক রাউন্ড টেবিল বৈঠকে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি পরে হোটেল ম্যারিয়ট ইস্টসাইডে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে আয়োজিত কাউন্টার টেররিজমের ওপর এশিয়ান লেডার্স ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুম-২তে সাউথ সাউথ বিষয়ক জাতিসংঘ অফিসে বাংলাদেশ আয়োজিত পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারিতে স্কেলিং আপ ইনোভেশনে সাউথ সাউথ এন্ড ট্রিয়াঙ্গুলার কোঅপারেশন বিষয়ক এক বৈঠকে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা মাকির্ন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত উদ্বাস্তু বিষয়ক এক বেঠকে যোগ দেবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। তিনি ২১ সেপ্টেম্বর বারাক ওবামা আয়োজিত এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সুইডিস প্রধানমন্ত্রী স্টেফেন আয়োজিত ডিসেন্ট ওয়ার্ক এন্ড ইক্লুসিভ গ্রোথ বিষয়ক স্যোসাল ডায়ালগ সংক্রান্ত গ্লোবাল ডিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুম-৮ এ পানি বিষয়ক উচ্চ পযার্য়ের এক প্যানেল বৈঠকে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিনে বিকেলে জেনারেল এসেম্বেলী হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনায় বক্তব্য রাখবেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এর দেয়া এক সম্বর্ধনা সভায় এবং হোটেল ওয়ার্ল্ডোপ অস্টোরিয়ায় বিজনেস কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল আন্ডার স্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত এক ভোজ সভায় যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে হোটেল গ্রান্ড হায়াতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের স্ট্যাট কাউন্সেলর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী অং সান সু কি, সুইস প্রেসিডেন্ট জোহান চেনিডার আম্মান এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব ও ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) নিবার্হী চেয়ারম্যান এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর সড়ক পথে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর আমিরেট্স এয়ারওয়েসের ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ডিসি’র ডুলেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ত্যাগ করবেন। শেখ হাসিনাকে বহনকারি ফ্লাইটটি দুবাই হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।