মন্ত্রিসভা ইলেক্ট্রোনিক মাধ্যম দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে অথবা এ ধরনের অপপ্রচারে মদদ যোগালে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আজ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, এই নতুন আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাইবার অপরাধ বন্ধ করা ।
আইনে বলা হয়েছে, ইলেক্ট্রোনিক মাধ্যম দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ এবং এর চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অথবা আদালত কর্তৃক মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে কেউ অপপ্রচার চালালে তাকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ন্যুনতম তিন বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী বিমান সাইবার ম্যানেজমেন্টের মতো কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোতে হামলা অথবা হ্যাকস্ করলে তাকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড ও সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদন্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে।
আলম বলেন, সাইবার সন্ত্রাসী অপরাধে দেশের আথির্ক ও প্রশাসনিক ক্ষতি হতে পারে, এ জন্য এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে খসড়া আইনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধনী) আইন’ ২০১৩ এর ধারা ৫৪, ৫৫, ৫৬, ও ৫৭ প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে সাইবার অপরাধের জন্য সবোর্চ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন ২ বছরের কারাদন্ড এবং সবোর্চ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
আলম বলেন, বিষয়টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সাইবার সন্ত্রাসী অপরাধ হিসাবে গণ্য করায় প্রস্তাবিত এই আইন সাইবার বন্ধ এবং বাংলাদেশের ঐক্য ও সংহতিকে আরো সুদৃঢ় করবে।
আইনে কম্পিউটার, মোবাইল, অথবা অন্য যে কোন ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইসের মাধ্যমে কোন অপরাধ করা হলে অপরাধীকে সবোর্চ্চ ৫ বছর এবং সর্বনিম্ন ২ বছর কারাদন্ড ও তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে কম্পিউটার, মোবাইল অথবা যে কোন ইলেক্ট্রোনিক ডেভিস ব্যবহার করে কোন প্রতারা অথবা জালিয়াতি করা হলে, এ জন্য অপরাধীকে সবোর্চ্চ ৫ বছরের এবং সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদন্ড ও তিন লাখ টাকা জরিমানা
অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনে গোপনীয়তা প্রকাশ করার দায়ে দু’বছরের কারাদন্ড এবং দু’লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত, পর্নোগ্রাফির জন্য সবোর্চ্চ ১০ বছর এবং সর্বনিম্ন দু’বছরের কারাদন্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, মানহানি এবং ধমীর্য় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য সবোর্চ্চ ২ বছর এবং সর্বনিম্ন দু’মাস কারাদন্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত এবং শত্রুতা সৃষ্টি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য সবোর্চ্চ ৭ বছর এবং সর্বনিম্ন ১ বছর কারাদন্ড এবং ৭ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংস্থার প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার নিয়োগকৃত মহাপরিচালক প্রয়োজন মনে করলে জরুরি ভিত্তিতে কম্পিউটার রিসোর্সের মাধ্যমে কোন তথ্যের সম্পচার বন্ধে যে কোন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারবেন।
মহাপরিচালক প্রয়োজনে তাৎক্ষনিকভাবে কোন সম্পচার বন্ধের নির্দেশ দিতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, আইনে ডিজিকে সম্ভাব্য আইন লংঘনের জন্য নিষেধাজ্ঞামূলক নির্দেশনা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলম বলেন, মন্ত্রিসভা এ ছাড়াও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি নতুন আইন প্রণয়নে’ মেট্রোলজি আইন -২০১৬’ এর খচড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশে কোন মেট্রোলজি আইন নেই। ফলে মেট্রোলজি সংক্রান্ত কর্মকান্ড প্রশাসনিক নির্দেশনায় চলে। পাশাপাশি এটি আর্ন্তজাতিক মেট্রোলজিকেল সংস্থার (ডব্লিউএমও) সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। তিনি বলেন বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে বর্তমানের অধিদপ্তর, মহাপরিচালক ও সংস্থার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আসবে। প্রস্তাবিত আইনে আরো উন্নতমানের আবহাওয়া পর্যবেক্ষনের জন্য আবহাওয়া নেটওয়ার্কের বিধান রাখা হয়েছে।
আলম বলেন, খসড়া আইনে আবহওয়ার পূভাবাস ও সর্তকতার জন্য ডিভাইসে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা।
মন্ত্রিসভা হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৬, বৌদ্ধ ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট আইন- ২০১৬, খ্রিস্টান ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
আলম আরো বলেন, দেশের পরিবেশ রক্ষায় রিজার্ভ ও প্রাকৃতিক বনের গাছ কাটা বন্ধ ২০২২ সাল নাগাদ অব্যাহত রাখতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।
পাশাপাশি মন্ত্রিসভা প্যারিস চুক্তি অনুমোদনের জন্য অপর একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
বৈঠকে মন্ত্রিবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতি মন্ত্রিগন যোগ দেন এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগন উপস্থিত ছিলেন।