গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বেসরকারিখাতের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আমরা কয়েকটি বিদেশী কোম্পানির সাথে কাজ করছি। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের মত কাজে এগিয়ে আসতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তারা এ কাজে এগিয়ে এলে, তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
শনিবার ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে ‘সমুদ্র অর্থনীতি: বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট।
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খোরশেদ আলম,আমেরিকান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (এ্যামচেম) সাবেক সভাপতি আফতাবুল ইসলাম,ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান ও শাহজাহান খান, বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হুমায়ুন রশিদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওস্যানোগ্রাপি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. কাওসার আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
জ্বালানী উপদেষ্টা বলেন,বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধানের বিষয়টি বর্তমানে বেশ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।এজন্য এ কাজে কেবলমাত্র সরকার নয়, দেশীয় উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি জানান,সমুদ্রসীমায় জরিপ চালানোর লক্ষ্যে জার্মানি থেকে একটি নতুন প্রযুক্তি সক্ষম জাহাজ ক্রয় করা হয়েছে, যা শিগগিরই দেশে এসে পৌঁছাবে।
দেশে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়ে কাজ করছি, যা দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে দেশে ৪ মিলিয়ন বসত বাড়িতে সোলার পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, যার সংখ্যা পৃথিবীর সবচাইতে বেশি।’
তিনি বলেন, গৃহাস্থলীর রান্না কাজের সূর্যের আলো ব্যবহারের গবেষণা পরিচালনা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। গৃহাস্থলীর কাজের বর্তমানে ব্যবহৃত গ্যাসের পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং এলপিজি ব্যবহার বৃদ্ধির আহবান জানান তিনি।
সেমিনারে মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেন, আমাদের জীবন যাত্রার গতিধারাকে চলমান রাখার জন্য দূষণ মুক্ত ও সম্পদশালী সমুদ্র অত্যন্ত অপরিহার্য। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মৎস আহরণ, সমুদ্র দূষণ এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের সমুদ্র অঞ্চলগুলো বর্তমানে ঝুকিঁপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের পাশপাশি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এ সম্যসাগুলোর দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি সমুদ্র দূষণ ও বৈশ্বিক জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপসমূহের প্রশংসা করেন।
খোরশেদ আলম বলেন, বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে গভীর সমুদ্র এলাকায় বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এবং নতুন এ জলসীমার পরিমান বাংলাদেশের মোট স্থল অঞ্চলের প্রায় ৮১ শতাংশ।তিনি সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে বিভাগ ও কোর্স চালুর প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন বাড়ানোর জন্য উচ্চ পণ্য পরিবহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নদীবন্দরগুলোর আধুনিকায়ণ করা জরুরি।
খোরশেদ আলম বলেন, নতুন সমুদ্রসীমা আবিষ্কারের ফলে বাংলাদেশে ক্রুজ শিপ পরিচালনার মত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং এ খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৭৫টির মত ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে, যেখাতে পর্যটন সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে পুরাতন জাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় বিপদজনক হতে পারে। এজন্য তিনি এ ধরনের জাহাজ না কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বাংলাদেশের নতুন সমুদ্র সীমার যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্র দূষণ, দক্ষ মানব সম্পদের অভাব,সমুদ্র সীমা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদের অপ্রতুলতা, গবেষণা পরিচালনা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর দক্ষতার অভাবকে দায়ী করেন। তিনি এ বিষয়ে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন এবং বৈশ্বিক যোগযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মূল প্রবন্ধে ড. কাওসার আহমেদ বলেন, সমুদ্র সম্পদ আহরণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কেবলমাত্র তেল-গ্যাস আহরণ নয়, এর পাশাপাশি মাছ, শৈবালসহ সব ধরনের সমুদ্র সম্পদ আহরণে আরো উদ্যোগী ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন।
তিনি সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।