২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন আসামী এখনো পলাতক রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বর্বোরোচিত ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১২তম বার্ষিকী পালিত হবে কাল।
হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলার পৃথক চার্জশিটে মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল মামলা সম্পর্কে বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন পলাতক রয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম সাবেক মন্ত্রী এবং জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এবং ৮ জন জামিনে রয়েছে ও অন্যরা বর্তমানে বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছে।
অপর ১৯ জন আসামী বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পলাতক ১৯ আসামী হলো- তারেক রহমান লন্ডনে, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোর্সালীন এবং তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে।
জঙ্গিনেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (পূর্ব) এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসান বিদেশে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে।
তবে অপর অভিযুক্ত পলাতক হারিস চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু এরা দুইজন কারাবন্দি বিএনপি সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। পিন্টুও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত।
দলকে নেতৃত্বশূন্য করতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এ জঘন্য হামলা চালানো হয়।
মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত এবং অপর ৫০০ জন আহত হয়েছে। শেখ হাসিনা ওই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।
সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২১ আগস্টের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুইটি মামলায় ২০০৮ সালের ১১ জুলাই প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং ২১ জন হুজি নেতাকর্মীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।
পরে নতুন করে তদন্তের পরে ২০১২ সালের ৩ জুলাই অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুইটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। দুইটি মামলায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২।
বিএনপি-জামায়াত আমলে প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচাতে মামলা ভুল পথে নিয়ে যেতে তদন্তকারীরা তদন্ত ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।
অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে বিএনপি’র সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান বর্তমানে জেলে রয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান এবং আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছেন।