আমাদের গ্রাম গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মোক্তারপুর যাহা শীতলক্ষা নদীর পশ্চিম পাড়ে এবং গাজীপুর জেলার সর্ব পুর্বে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি।তাই সব কথা মনে না থাকলেও কিছু কিছু কথা আমার খুব মনে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নদীপথ ছাড়া ঢাকা থেকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার মাধ্যম ছিল সাইকেল বা মটর সাইকেল। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আমাদের শ্রদ্ধেয় বিয়াই গাজীপুর সদরের এমএনএ জনাব আবদুল হাকিম মাস্টার সাহেব আমাদের বাড়ীতে আসেন।আমাদের বাড়ির বড় জেঠা জনাব সুলতান উদ্দিন খানের ঘরে অতি গোপনীয়তার সাথে উনাকে রাখা হয়। আমাদের বাড়িতে উনার থাকার একটি নিরাপদ স্থান মনে করে তিনি আমাদের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন।কিছুদিন পর উনি উনার একজন অতি বিশ্বস্ত লোকের মাধ্যমে আমাদের কালিগঞ্জের এমএনএ জবাব ময়েজ উদ্দিন সাহেবকে একটি পত্র পাঠান।পত্র পাওয়ার পর আমাদের এমএনএ জনার ময়েজ উদ্দিন সাহেব আমাদের বাড়িতে আসেন এবং উনারা আমাদের বাড়ীতে অবস্থান করতে থাকেন। উক্ত শ্রদ্ধেয় নেতাদ্বয়ের খবরা খবর নেয়ার জন্য আমাদের বাড়ীতে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা, উনাদের আত্মীয় স্বজন ও হিতাকাক্ষীর সমাগম হতে থাকে।আমাদের শ্রদ্ধেয় অতিথীগনের নিরাপত্তার জন্য কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়ীতে অবস্থান করতে চাইলে আমার পিতা জনাব মোহাম্মদ আলী খান ও বড় ভাই জনাব এম এ কবির খান অতি সাহসের সাথে আমাদের বাড়ীতে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সবদিক বিবেচনা করে মুক্তিযুদ্ধাদের অশ্রগুলো দিনের বেলা আমাদের থাকার ঘরের পাটাতনের উপরে রাখা হতো।যেহেতু আমি ছোট ছিলাম তাই পাটাতনের উপরে অশ্রগুলো উঠানো ও নামানোর সময় আমাকে পাটাতনের উপরে উঠানো হতো।বেশীর ভাগ অশ্র ছিল রাইফেল, ওজনেও ছিলো খুব ভারী।তাই পাটাতনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আশ্রগুলো আমাকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে হতো। অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য মুক্তিযুদ্ধা ভাইয়েরা সারারাত জেগে জেগে পাহারা দিতেন। প্রায় ৩০ দিন অবস্থানের পর আমাদের শ্রদ্ধেয় অতিথীদ্বয় আমাদের বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।শ্রদ্ধেয় মেহমানগন চলে গেলেও ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়ীতে অবস্থান করতে থাকেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই মাস পর্যন্ত উনারা আমাদের বাড়িতে অবস্থান করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা বিরুদীদের নিয়ে বিএনপি ক্ষমতাশীন হওয়ার পর স্বাধীনতা বিরুধীরা আমাদেরকে জেল জুলুম থেকে শুরু করে নানা ভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করে। আমি স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র থাকা অবস্থায় স্বাধীনতা বিরুদীরা আমার, আমার পিতা জনাব মোহাম্মদ আলী খান, আমার জেঠা জনাব সুলতান উদ্দিন খান এবং আমার জেঠাত ভাই জনাব আমজাদ হোসেন খানের নামে সম্পুর্ন একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। হঠাত এক রাতে পুলিশ এসে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই আমার পিতা জনাব মোহাম্মদ আলি খান এবং আমার জেঠা সুলতান উদ্দিন খানকে থানায় নিয়ে যায়। উক্ত মামলার জন্য আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি মেনে নিতে হয়। আমার লেখা পড়ার অনেক ক্ষতি হয়। তবু ১৯৮০ সালে আমি এসএসসিতে প্রথম শ্রেনীতে উর্নীত হই।
*****চলবে*****
Mohammad Moniruzzaman Khan
Editor & Publisher
www.priyodesh.com