লবণাক্ত অঞ্চল বলে পরিচিত খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় ১৮ বছর আগে লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। দীর্ঘ সময় পরও এলাকার কৃষকদের তেমন কোনো সুফল এনে দিতে পারেনি সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি।
তবে কেন্দ্রটি কার্যকর করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্তপক্ষ।
গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এলাকার কৃষকদের মনোভাব জানতে চাইলে দেবিতলা গ্রামের কৃষক অংশুমান রায় (৪০) বাংলানিউজকে জানান, ওই কেন্দ্রর পাশে আমার সাড়ে ৩ বিঘা জমি আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা আমাকে কোনো পরামর্শ দেননি।
ফুলতলা গ্রামের নিলোৎপল গোলদার (৩২) বলেন, ‘তারাতো কখনও সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন না।’
লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিধান কুমার ভাণ্ডার বাংলানিউজকে জানান, লবণাক্ত পানি ও মাটিতে কোন সময় কোন ফসল ভাল উৎপাদন হয় তাই নিয়ে আমরা গবেষণা করে কৃষকদের জানাই।
’৯৪ সালে কেন্দ্রটি শুরু হলেও ২০০৩ সালে ভবন তৈরির পর কাজ শুরু হয়। বছরে মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। যার অধিকাংশ টাকাই ওই কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও ছোটখাটো কাজে ব্যয় হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, গবেষণায় আমরা খামার পুকুর প্রযুক্তিতে সফলতা পেয়েছি। এ প্রকল্পে বর্ষার পানি ধরে রেখে পুকুর পাড়ে ওই পানি দিয়ে সবজি ও ধান চাষ করলে ভাল ফসল পাওয়া সম্ভব।
আমরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেন্দ্রের লবণাক্ত মাটিতেই মিষ্টি কুমড়া, ঢ্যাঁড়স, করলা, ঝিংগা, বেগুন, মানকচু, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজি ও ধান ফলাতে পেরেছি। আর এসব বিষয়গুলো আমরা ওই এলাকার চাষীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করে থাকি।
এ বছর বাজেট পাওয়ার ফলে কাজ বাড়বে। সর্বপোরি আমাদের কেন্দ্র থেকে খামার পুকুর প্রযুক্তিসহ ৪-৫টি বিষয়ে তথ্য বের হয়েছে। আশা করছি আগামীতে ভাল কিছু করা সম্ভব।
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) এলাকার সংসদ সদস্য ননী গোপল মণ্ডল জানান, খোঁজ খবর নিয়ে এদের কাউকে পাওয়া যায় না। শুধু শুধু সরকারি টাকা খরচ। বাংলাদেশের মধ্যে মাত্র দু’টি লবণপানি পরীক্ষা কেন্দ্র আছে তার মধ্যে আমাদের বটিয়াঘাটায় একটি। তারপরও কেন্দ্রটির সুষ্ঠু ব্যাবহার হচ্ছে না।
এরা সরকারের টাকার অপচয় ছাড়া কৃষকদের কোনো উপকারেই আসছে না। কারণ এই কেন্দ্রে কোনো কর্মকর্তা থাকেন না।
সপ্তাহে দু’এক দিন এসে কিছুক্ষণ থেকেই চলে যায়। টাকা পয়সা পেলে প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে কিছু মুখচেনা মানুষকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া এলাকার কৃষকরা তাদের কাছ থেকে কোনো সহয়তাও পায় না।
বিষয়টি নিয়ে উধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ‘ড্যানিডা’ প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা-দাকোপ সড়কের পাশে গাগড়ামারী এলাকায় ১০ একর জমির ওপর কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনিস্টিটিউট পরিচালিত এ কেন্দ্রটি তখন থেকে এলাকার লবণাক্ত মাটি ও পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু আজ অবধি তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য গবেষণা কাজ যেমন হয়নি তেমনি ওই কেন্দ্র সম্পর্কে এলাকার কৃষকদের ভালো ধারণাও নেই বলে জানান সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল।
এদিকে এ কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা দেখতে বাংলাদেশ মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক খোরশেদ আলম সোমবার খুলনায় আসছেন।
তিনি মঙ্গলবার ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পাশাপাশি এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে নিশ্চিত করেছেন খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন দফতর।