ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ইসলামের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তারা এ পবিত্র ধর্মের সর্বনাশ করছে।
তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারি না, যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে তা কিভাবে ইসলামের জন্য ভালো হতে পারে। আমি মনে করি, এতে করে ইসলামকে কলঙ্কিত এবং পবিত্র ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এ ধরনের কাপুরুষোচিত কর্মকান্ডকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ক্ষতি করছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে গণভবনে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে অনুদানের চেক গ্রহণকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সমস্যা আসবে এবং আমরা এসব সমস্যা সমাধান করবো। আমাদের অবশ্যই সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমরা যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছি, ইনশাল্লাহ সেভাবেই মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করবো।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ চলতে দেবে না।
তিনি বলেন, তাই আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতা চাই। যে যেখানেই থাকুন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে- যাতে কেউ এই দুই দানবের সাথে জড়িত হতে না পারে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে এ ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এমনকি গ্রামের জনগণও এখন এই দুই শয়তানের বিরুদ্ধে সজাগ রয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা মোকাবেলায় তাঁর সরকার বসে নেইÑ বরং বন্যাদুর্গতদের কাছে খাদ্য, পানীয় এবং ওষুধের মতো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর দল আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে ৮টি টিম গঠন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি সত্যি যে, বন্যা গ্রামের মানুষের জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে। তবে এতে পলিমাটি বয়ে আসার কারণে জমি উর্বর হয় এবং দেশের মানুষ লাভবান হয়। বন্যার পরে এ পলিমাটি দৃশ্যমান হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন এ ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
আর্থ-সামাজিক খাতে দেশের চমৎকার সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি বর্তমানে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী। এ প্রসঙ্গে তিনি বেসরকারি খাতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার দেশের সকল খাত বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের অধিকতর উন্নয়নে বর্তমান সরকার অর্থনীতিতে আরো গতিশীলতা আনতে চায়। তিনি আরো বলেন, বর্ষার সময় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ধারাবাহিক ঘটনা। কিন্তু আমরা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং মুদ্রাস্ফীতির হার নি¤œমুখী করতে সক্ষম হয়েছি।
বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের অর্থ দুর্গত মানুষের সেবায় ব্যবহার করা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর অধীন ৩১টি ব্যাংক এবং ওয়ালটন গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা), ইনস্টিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ ও গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুদানের চেক প্রদান করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
বিএবি সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।