ঢাকা, ৩ আগস্ট, ২০১৬ : গোখাদ্যে স্টেরোয়েড ও রাসায়নিক মেশানো প্রতিরোধে আসন্ন ঈদে সকল পশুর হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারী মেডিকেল টিম মনিটর করবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।
তিনি আজ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি এবং আসন্ন ঈদুল আজহার নিরাপদ মাংস উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও সচিব মাকসুদুল হাসান খান।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শুভংকর সাহা, ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক শাহ সৈয়দ আব্দুল বারী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসুফ, ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় প্রমুখ।
ছায়েদুল হক বলেন, ঈদকে সামনে রেখে অসাধু উপায়ে কেউ যাতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে স্টেরোয়েড মেশাতে না পারে সেজন্য মনিটরিংয়ের পাশাপাশি আইন ও বিধি অনুযায়ী মামলা করার ক্ষমতা রাখবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রী বলেন, দেশে দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণে গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। জাত উন্নয়নের লাগামসই প্রযুক্তি হলো কৃত্রিম প্রজনন। এ লক্ষ্যে কৃত্রিম প্রজনন সেবা দেশের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশে দুধ মাংস ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, দেশে কোরবানীর সময়ে যে পরিমাণ গরু কোরবাণী হয় তার চাহদিার সিংহভাগ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যোগান দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় দেশে ছাগলের কোনো ঘাটতি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রধান লক্ষ হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্রের হার শূন্যে নামিয়ে আনা এবং পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ। অতি স্বল্প পুঁজি নিয়ে মাত্র একটি গরু হৃষ্টপুষ্ট করে আমরা ব্যক্তিপর্যায়ে সম্পদ সৃষ্টির প্রয়াস পেতে পারি।’
গরু হৃষ্টপুষ্ট করার মাধ্যমে পরিবারের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়িয়ে স্বচ্ছলতার দিকে এগুলে পরিবারিক পুষ্টির উন্নয়ন হবে।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানে এ দুধ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য একটি কার্যক্রম।
তিনি বলেন, ব্যাংকের যে নীতিমালা হয়েছে তাতে সমন্বয় সাধন করলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের কাছে এলে খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হবে।
অজয় কুমার রায় বলেন, আসন্ন কোরবানীর ঈদের জন্য এ বছর ৩৩ লাখ গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আমদানি করা হবে না। স্টোরোয়েড, এন্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক খাদ্যরোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে। মাঠে নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ অর্থনীতি শাখার ইউএলও (লীড-রিজার্ভ) ড. মো. গোলাম রাব্বানী ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (প্রাণিসম্পদ প্রশাসন) উপ-পরিচালক ড. মো. আইনুল হক।
বক্তারা বলেন, ৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও দুধ ও মাংসের উৎপাদন ত্বরান্বিত হবে।
প্রবন্ধে জানা যায়, গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় দিকনিদের্শনা প্রদান, সচেতনতা তৈরির জন্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে অধিদফতরে সভা ও আলোচনা আহ্বান, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রদান ও আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাজধানী, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল পশুর হাটে ভেটেরিনারি সেবা প্রদানের জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, তদারকি কমিটি ও রিজার্ভ স্ট্রাইকিং টিম গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
অন্যদিকে কার্যক্রম জোরদারকরণে ব্যাংক শাখা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধন, ব্যাংক শাখাগুলো ঋণ বিতরণের বিবরণী নিয়মিতভাবে উক্ত অধিদফতরকে অবহিত করে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিতরণকৃত ঋণ বকনা ক্রয়ে ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্যে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার এবং ঋণের সুষম বিতরণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান উল্লেখ্যযোগ্য।
পরে প্রধান ও বিশেষ অতিথি মাঠ পর্যায়ে কর্মরত প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ঈদ উপলক্ষে নিরাপদ মাংস উৎপাদনের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন এবং মাঠ পর্যায়ে মনিটরিংসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দেন।