ঢাকা, ২৬ জুলাই ২০১৬ : তৃণমুল পর্যায় থেকে প্রতিভাবান খোলোয়ারদের খুঁজে বের করতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ একটি বড় ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের ইতিহাসে প্রতিভা অন্বেশনের জন্য এটি হচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও বড় প্রকল্প। প্রকল্পটির নাম হচ্ছে ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে বাছাইকৃত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ২০১৫-১৬’ । ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩১ টি ক্রীড়া ফেডারেশনের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে মেধাবীদের খুঁজে বের করা হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গড়ে তোলা হবে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় খেলার মাঠ উন্নয়ন ও সংস্কার এবং প্রশিক্ষণ কাজে বিশেষ সহায়তা’র আওতায় আনা হবে। ৩টি কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৩১টি ডিসিপ্লিনে ক্রীড়া পরিষদ এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) অশোক কুমার বিশ্বাস বাসসকে বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সুনামের সাথে অংশগ্রহণ বিশেষ করে আগামী এসএ গেমসের প্রতিযোগিতার কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকার দেশের ক্রীড়ার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে এই ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হলে দেশে প্রতিটি ডিসিপ্লিনে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সমাগম ঘটবে, যারা পরবর্তীতে জাতীয় দলভুক্ত হতে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’
এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়মিত চলমান থাকলে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ পাবেন। তবে চলতি কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের উপরই ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন অশোক কুমার।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জঙ্গীবাদ যেভাবে গ্রাস করছে সেখান থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে ক্রীড়াঙ্গনের প্রসারের কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। তাই এবারের এই কার্যক্রম রাস্ট্রের সুরক্ষায়ও ভুমিকা রাখতে পারবে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু কিশোররা ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়বে। ফলে বিপথে যাবার চিন্তা করবেনা।’
প্রকল্পটি গ্রহণের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) দীল মোহাম্মদ বাসসকে বলেন,‘ বর্তমানে ক্রীড়া বান্ধব সরকার ক্ষমতায় থাকার ফলে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার লক্ষ্য নিয়ে বৃহদাকারের এবং পরিকল্পিত এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।’
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকতারা এবং পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের আন্তরিক প্রচেস্টার ফসল এই প্রকল্প। প্রকল্পের প্রধান সমন্বায়ক এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ বাদল রায় বাসসকে বলেন, ‘অতীতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সাড়া না পাওয়ার কারণে কিংবা কর্মকর্তাদের উদ্যোগ শীর্ষ পর্যায়ে পৌছাতে না পারার কারণে হয়তো সেটি বাস্তবতার মুখ দেখেনি। তবে আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে থেকে এমন কর্মসূচি গ্রহণ করা গেলে দেশের ক্রীড়াঙ্গন অনেক দূর এগিয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘এবারের পরিকল্পনাটি বেশ নিখুঁত ভাবে প্রনয়ন করা হয়েছে। এখানে ফাঁকি মারার কোন সুযোগ নেই। কারণ পুরো কর্মকান্ডটি পর্যবেক্ষণের জন্য গঠন করা হয়েছে কয়েকটি মনিটরিং কমিটি। এর একটির প্রধান থাকবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কমৃকর্তা। আরেকটি কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) অশোক কুমার বিশ্বাস। এছাড়া ক্রীড়া পরিষদের প্রশিক্ষকরাও বিভিন্ন ফেডারেশনের অধীনে পরিচালিত কর্মকান্ডের রিপোর্ট ক্রীড়া পরিষদে নিয়মিতভাবে জমা দেবেন।
প্রকল্পের অর্থ যাতে অপচয় না হয় কিংবা প্রতিশ্রুত কার্যক্রমে কোন ধরনের গরমিল করা না যায় সেজন্য বরাদ্ধকৃত অর্থ ধাপে ধাপে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ছাড় পাওয়ার অর্থ ব্যয়ের দৃশ্যমান কার্যক্রম উপস্থাপন করার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় দফার অর্থ ছাড় দেয়া হবে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে উল্লেখ করে বাদল রায় বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রশিক্ষণ এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড় বাছাই কার্যক্রমের জন্য ফেডারেশনগুলোকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ আর কখনো দেয়া হয়নি। এ কার্যক্রমের জন্য ফেডারেশনগুলো সর্বনি¤œ ২৫ লাখ এবং সর্বাধিক এক কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ পাচ্ছে।’
বাস্তবতার নিরিখে ফেডারেশনগুলোকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসুচি পরিচালিত করতে হবে। এ কাজে স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সস্থার সহায়তা নিবে ফেডারেশনগুলো। পারফর্মেন্সের ঘাটতি থাকলে তালিকা থেকে যে কোন ফেডারেশনকে বাদ দেয়ার ক্ষমতা ক্রীড়া পরিষদের রয়েছে উল্লেখ করে দীল মোহাম্মদ বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে অবশিষ্ট ফেডারেশন গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’ তবে খেলার ধরনের ভিত্তিতে সবগুলো ফেডারেশনই সবগুলো উপজেলায় কার্যক্রম চালাতে পারবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টিও আমাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে রয়েছে।’
ক্রীড়া পরিষদের এই মেধাবী অন্বেষন কার্যক্রমে অনুর্ধ-১৫ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদেরকে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের স্তর অতিক্রম করে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।