এখন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এখন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

pm.18বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরও আড়াই বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় সাংসদদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদের চলতি অধিবেশন শেষে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে প্রস্তুতি এবং অবশিষ্ট উন্নয়নকাজ শেষ করতে নির্দেশ দেন তিনি। এ ছাড়া তিনি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির কার্যক্রম তদারক করা ও জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিরও নির্দেশনা দেন।
গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার ছিল। তবে বৈঠক শেষে পঁাচজন সাংসদের সঙ্গে কথা বলে এই নির্দেশনার তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বর্তমান সংসদের মেয়াদ আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। পঁাচ বছর মেয়াদের তিন মাস আগে থেকেই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। এ জন্য এখন থেকেই নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকায় যেসব উন্নয়নকাজ বাকি রয়েছে, তা শেষ করতে হবে। সরকার যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে, সেটি বারবার মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আগে কী ছিল আর আওয়ামী লীগ সরকার কী উন্নয়ন করছে, তা মানুষকে জানাতে হবে।
দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে। শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। এলাকায় যেসব সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলোকে সক্রিয় রাখতে হবে। যাঁরা এখনো কমিটি গঠন করেননি, দ্রুত গঠন করবেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
সূত্র জানায় বৈঠকে সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, বি এইচ হারুন, শামীম ওসমান, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা, হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন সাংসদ বক্তব্য দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে একজন মহিলা সাংসদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসনে নির্বাচিত মহিলা সাংসদ নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে শেখ হাসিনা সংরক্ষিত মহিলা সাংসদদের নিজ নিজ এলাকা তৈরির চেষ্টা না করার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলা সাংসদদের এলাকা তৈরির দরকার নেই। তিনিই তাঁদের মনোনয়ন দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আশ্বাস দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে দুজন সাংসদ অভিযোগ করেন মন্ত্রীদের আচরণ ভালো না। তাঁরা সাংসদদের মূল্যায়ন করেন না। মন্ত্রীরা যাতে সাংসদদের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ না করেন, তাঁরা সেই দাবি জানান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি বলে সূত্র জানায়। যেসব পুলিশ সদস্য জঙ্গিবাদ রুখতে গিয়ে প্রাণ দিচ্ছেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া এবং কোনো স্থাপনা তাঁদের নামে নামকরণনের পরামর্শ দেন আরেকজন সাংসদ। অন্য এক সাংসদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস ইসরাইলে হামলা করে না। এ থেকেই বোঝা যায়, এটা কাদের সৃষ্টি।
সূত্র জানায়, িচফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পুলিশ দিয়ে জঙ্গি দমন উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের সবাই আমাদের লোক নন। পুলিশে বিএনপি-জামায়াতের লোক রয়েছে।’
এ কথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তারা জীবন দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম রোখার চেষ্টা করছে। তাই ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ-অপছন্দের কারণে এভাবে বলা ঠিক নয়। আমাদের মধ্যেই তো কত ধরনের লোক রয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ সাংসদও পুলিশ বাহিনীতে সমস্যা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী কল্যাণপুরে সফল জঙ্গি অভিযানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও সোয়াত বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি জানান, তিনি রাতে অভিযান চালাতে না করেছেন। ভোরে যাতে অপারেশন চালানো হয়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ, রাতে করলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয় থাকে। নানা প্রশ্ন ওঠে।
দলীয় সাংসদদের এলাকায় গিয়ে সঠিক ইসলাম প্রচার করে জিঙ্গবাদ দমন ও জনসাধারণকে সচেতন করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জিঙ্গবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। সারা বিশ্বজুড়েই এখন তা ঘটছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ তা দমন করতে না পারলেও বাংলাদেশ পারবে।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জিঙ্গবাদবিরোধী নির্দেশনা ও এক লাখ আলেমের ফতোয়া অনুযায়ী জিঙ্গবাদবিরোধী প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেন।

অন্যান্য রাজনীতি