সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে দলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনার আহ্বান

সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে দলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা রাখতে শেখ হাসিনার আহ্বান

pm.24ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণ সচেতন থাকলে বাংলাদেশে কখনোই জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না।’
জনগণের প্রতিরোধের মুখে জঙ্গিবাদ ভেসে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক যেমনটা বিএনপি-জামায়াত তাদের সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ জনগণের প্রতিরোধের মুখে বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
শেখ হাসিনা আজ রাতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার উদ্বোধনী ভাষণে একথা বলেন।
দেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনীয় রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের) বিশেষ করে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলে তাদের নিয়ে কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। গ্রাম-গঞ্জে,পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জনগণই যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা সচেতন থাকলে এদেশে কখনোই জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না।
জঙ্গি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ‘অভূতপূর্ব সাড়া’ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটকু বলতে পারি যে, জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য আজ গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েই আমাদের চলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই অন্ধকার থাকবে না। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। সে যাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অবশ্যই এগিয়ে যাবে, উন্নতি হবে।’
দেশের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।
ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তরুণ ও যুবকদের ইসলামের মূল শিক্ষায় শিক্ষিত হবার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক মহল এবং শিক্ষকদের সজেতনতা বৃদ্ধির ওপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে বলেন, এই যে পহেলা জুলাই ঢাকায় হামলা চালানো হলো। কীভাবে তারা মানুষকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করে, এভাবে মানুষ মেরে তারা কী প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
ওই হামলার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাহিনীগুলোর তৎপরতায় আমরা ১৩ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। হামলাকারীদের মরদেহ আমরা রেখেছি। সেসব পরীক্ষা চলছে। হামলাকারীদের পেছনে কারা তা খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি সাহায্যও নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্ববাসী বাংলাদেশের পাশে রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবাই বাংলাদেশের পাশে আছে।
জঙ্গিদের অর্থদাতা যত শক্তিশালীই হোক, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের যারা লালন-পালন করবে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কে কত বড় ক্ষমতাশালী সেটা আমি দেখতে চাই না।
তিনি গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা জঙ্গিবাদের শিকড় খুঁজতে নেমেছি। কোথায় তারা (গুলশানে হামলাকারী) অর্থ পেলো, কারা তাদের অস্ত্র দিলো, আমরা খুঁজে বের করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ ঠান্ডা মাথায় এ ধরনের বীভৎস হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে না। সন্ত্রাসীদের মরদেহ রাখা আছে। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যেটা দেশে হচ্ছে না, সেটা বিদেশে পরীক্ষা করছি। আমরা দেখবো এর পেছনে কী কাজ করেছে। সেজন্য স্পেশাল কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
গুলশানের হামলার বীভৎসতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় অনেকে ভেবেছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং আমরা যেভাবে মোকাবেলা করেছি তার প্রশংসা করেছেন। বিশ্বনেতারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে তারা বাংলাদেশের পাশে রয়েছেন।
সভায় শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্ব জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে। গুলশান-শোলাকিয়ার ঘটনায় সারা বিশ্ব সমবেদনা জানিয়েছে। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বক্তৃতা করেন।
সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঁচাত্তরের ৩রা নভেম্বর কারা অভ্যন্তরে নিহত জাতীয় চার নেতার অন্যতম দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। অন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর