সংসদ ভবন, ১৯ জুলাই, ২০১৬ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে তা দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে পথ দেখাবে।
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর সহযোগিতায় অবশ্যই এই সন্ত্রাসীদের মূল উৎপাটন হবে। ইতোমধ্যে এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও জনমত সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ। এদেশ থেকে অবশ্যই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অবসান হবে। যে জনমত সৃষ্টি হয়েছে তা দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে পথ দেখাবে।’
তিনি আজ সংসদে হোলি আর্টিজান বেকারি, শোলাকিয়া, পবিত্র নগরী মদিনা ও ফ্রান্সের নিস শহরে সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলায় দেশী-বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ায় এবং বিশ্বব্যাপী সংঘটিত জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আনীত নিন্দা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন ধরনের সন্ত্রাসের আমি তীব্র নিন্দা জানাই। ২০ জনকে সন্ত্রাসী খুনিরা হত্যা করেছে। ১৩ জনকে উদ্ধার করা গেছে। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, দুইজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং র্যাব ও পুলিশের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ বাহিনী জীবন দিয়ে হামলাকারীদের মোকাবেলা করেছে। তাদের অবদান চির স্মরণীয়। পরে সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী কয়েক মিনিটের মধ্যে জিম্মিদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শোলাকিয়ায় হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল বলে আইন-শৃংখলা বাহিনী সতর্ক ছিল। শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রায় এক মাইল দুরে চেক পোষ্টে সন্ত্রাসীরা হামলা করে। সেখানেও দুইজন পুলিশ নিহত হয়েছে। একজন নিরীহ নারী জীবন দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে নেইনি। এর মূল উৎপাটনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর শিকড় পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক তথ্য পাওয়া গেয়ে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। হযরত মোহাম্মদ (স.) শান্তির বাণী শুনিয়েছেন। তারাবিহ নামাজ ও ঈদের নামাজের সময় এরা মানুষ হত্যা করেছে। আর যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হচ্ছে তারা বিত্তশালী পরিবারের সন্ত্রাস। এজন্য সকলের প্রতি আহবান নিজ সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক হোন। তারা কোথায় যাচ্ছে কি করছে তা খোঁজ-খবর নিতে হবে।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তারা বেহেস্ত পাওয়ার জন্য মানুষ খুন করছে। যারা এসব করছে তারা জান্নাত তো দূরের কথা জাহান্নামও পাবেন না। তারা পবিত্র ধর্ম ইসলামকে এসব কর্মকান্ড করে সারাবিশ্বের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি তুরস্কে যা ঘটেছে তা বাংলাদেশেও ঘটেছে ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে। জিয়া-এরশাদ একইভাবে অভূত্থানের নামে মানুষ হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, যারা এই সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে মদদ দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে। এরা ইসলাম ও মানবতার শত্রু।
আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সরকারি দলের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, আব্দুল মতিন খসরু, আব্দুল মান্নান, ফারুক খান, শহীদুজ্জামান সরকার, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী, জাতীয় পার্টির সদস্য জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশিদ, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বিএনএফ’র সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্র সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী।