ঢাকা, ১১ মে, ২০১৬ : দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফল আজ প্রকাশিত হয়েছে।
৮টি সাধারণ বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরিসহ মোট ১০ বোর্ডের পাসের গড় হার ৮৮ দশমিক ২৯ ভাগ। গত বছর ১০ বোর্ডের পাসের এ গড় হার ছিল ৮৭ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার বেড়েছে ১ দশমিক ২৫ ভাগ।
এবার ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পাশের গড় হার ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের পাশের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পাশের হার ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
পাসের হার এ বছর সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বোর্ডে, ৯৫ দশমিক ৭০ ভাগ এবং সবচেয়ে কম বরিশাল বোর্ডে, ৭৯ দশমিক ৪১ ভাগ।
এছাড়া এবছর ঢাকা বোর্ডের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৭ ভাগ, কুমিল্লা বোর্ডের পাসের হার ৮৪ ভাগ, যশোর বোর্ডের পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ ভাগ, চট্টগ্রাম বোর্ডের পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৪ ভাগ এবং দিনাজপুর বোর্ডের পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৯ ভাগ।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫২৩ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। গত বছর ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৯ জন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি পাসের সংখ্যাও বেড়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৭ জনের।
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। এবার জিপিএ ৫ কমেছে ২ হাজার ১৪০টি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এবার কমেছে। গত বছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাছিল ৫ হাজার ৯৫টি, এবার তা ৪ হাজার ৭৩৪টি। কমেছে ৩৬১টি।
আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
এ সময় শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবছর ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, যশোর, বরিশাল ও দিনাজপুর এই ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ২৮৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৩ জন।
তিনি বলেন, এ ৮টি সাধারণ বোর্ডে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৬ হাজার ৭৬৯ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৬৩১ জন।
মন্ত্রী জানান, ঢাকা বোর্ড থেকে এবার ৪ লাখ ১২ হাজার ১০১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৪৮ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৭ ভাগ।
রাজশাহী বোর্ড থেকে এবার ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৮ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭০ ভাগ।
কুমিল্লা বোর্ড থেকে এবার ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৩ জন। পাসের হার ৮৪ ভাগ।
যশোর বোর্ড থেকে এবার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৯৪ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ ভাগ।
চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এবার ১ লাখ ১৩ হাজার ২৬৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ২৬১ জন। পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৪ ভাগ।
বরিশাল বোর্ড থেকে এবার ৮২ হাজার ২৯২ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬৪ হাজার ৯০২ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪১ ভাগ।
সিলেট বোর্ড থেকে এবার ৮৪ হাজার ৬৩৩ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭১ হাজার ৫৮৬ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৭৭ ভাগ।
দিনাজপুর বোর্ড থেকে এবার ১ লাখ ৫০ হাজার ৩২১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ২১ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৯ ভাগ।
মন্ত্রী বলেন, মাদরাসা বোর্ড থেকে এবার ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩১৪ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ ভাগ। গতবছর এ হার ছিল ৯০ দশমিক ২০ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৮৯৫ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১১ হাজার ৩৩৮ জন। এর আগের বছর পেয়েছিল ১৪ হাজার ১৩ জন।
কারিগরি বোর্ড থেকে এবার ৯৮ হাজার ৫৮১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৮১ হাজার ৯২৮ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ১১ ভাগ। গতবছর এ হার ছিল ৮৩ দশমিক ০১ ভাগ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৯৭ জন। গত বছর পেয়েছিল ৬ হাজার ৯৩২ জন। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯৫০ জন।
বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের পাসের হার সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর ৮টি সাধারণ বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৬ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৯ ভাগ। বিজ্ঞানে জিপিএ ৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৯ হাজার ৩৮৪ জন।
তিনি বলেন, এই ৮ বোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৩ জন অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হ্জাার ৭০৮ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৩৬ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ২০১ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭০৯ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৯৮ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ১৮৪ জন। বিদেশের ৮টি কেন্দ্র থেকে ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৩৫৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৭ ভাগ।
এবার মেয়েরা পাসের হারে ও ছেলেরা জিপিএ ৫ এ এগিয়ে আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী নাহিদ বলেন, ৮ লাখ ৪ হাজার ১৫৪ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার ৮০৮ জন। তাদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৩৯ ভাগ। আর ৮ লাখ ৪১ হাজার ৪৭ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৭ জন। তাদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ২০ ভাগ। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এ বছর শূন্য দশমিক ১৯ ভাগ বেশি পাস করেছে। তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা জিপিএ ৫ বেশি পেয়েছে ৫ হাজার ৬৯৩ জন ছাত্র। ছেলেরা এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৭ জন আর মেয়েরা জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫২ হাজার ৩৪ জন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর ২৩ বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর থেকে গণিত, উচ্চতর গণিত, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবারের মতো এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বোর্ড দ্বারা সরবরাহকৃত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে ফল পৌঁছে দেয়া হয়েছে।