বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘উচ্চ মার্গের সুশীল বাবুদের’ সরকার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কী প্রয়োজন- ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা দল’ তা জানবে না।
শনিবার গণভবনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউই এ দেশের মানুষের প্রয়োজন বুঝবে না।”
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পক্ষে যুক্তি দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই অন্তবর্তী সরকারের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখার কথা উল্লেখ করেছিল।
দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন না বাড়ানোয় বিগত সরকারগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “উচ্চমার্গের ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থেকেও একটু বিদ্যুৎ বাড়াতে পারেনি।”
“তারা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে দেশে আতংক সৃষ্টি করলো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠন ধ্বংস করলো। মুরগী মারা থেকে শুরু করে সব কিছুই করলো তারা। শত বছরের পুরনো বাজার ভাঙলো। সব অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করলো।”
সাগরে তেল-গ্যাসের ব্লক নির্ধারণ নিয়েও চার দলীয় জোট সরকারের ও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “উচ্চ মার্গের সুশীল বাবুদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এর ধারাবাহিকতা রাখলো।”
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে আসার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাকি আছে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ। এর রায় হবে ২০১৪ সালে। জনগণ যদি আবার আমাদের ভোট দেয়। তাহলে, আমরা রায় আমাদের পক্ষে আনবো।”
প্রতিকূলতায় ঐক্যবদ্ধ থাকুন
নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী বলেন, “আমরা কয়েকটি কঠিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমরা দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।”
যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ একতাবদ্ধ থাকলে কেউ পেরে ওঠে না। গোলাম আযমও নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে পারেনি।”
‘পরাজিত শক্তিকে দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়’
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিরোধীদলের আসনে বসানোয় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের মাননিসকতা বুঝতে হবে। এখন তারা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচাতে চাইছে। কী কারণে বাঁচাতে চাইছে- তা খালিজ টাইমসেই বেড়িয়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।”
চলতি মাসের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের পত্রিকা খালিজ টাইমসে প্রকাশিত এত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিল।
অবশ্য বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে বলেছে- ওই প্রতিবেদন ভিত্তিহীন।
কোনো দল বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা মত বিনিময় অনুষ্ঠানে বলেন, “যারা পরাজিত শক্তির কাছ থেকে টাকা নেয়, পরাজিত শক্তির এজেন্ট হিসাবে কাজ করে- তাদের দিয়ে দেশের মানুষের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব না।”
চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা, তখনকার সাংসদ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টার এবং সাবেক সাংসদ মমতাজউদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যাতে না থাকে- সেজন্য তারা (বিএনপি-জামাত) সারাদেশে হত্যা শুরু করেছিলো।”
বিরোধী দল নিজেদের লোককে ‘গুম করছে’ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
এতো অশ্লীল ভাষা!
টানা ৭৮ দিন অনুপস্থিতির পর বিএনপির সংসদে ফেরা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্য পদ ও বেতন-ভাতা রক্ষার জন্যই তারা সংসদে এসেছিলেন।
গত ১৮ মার্চ বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় সাংসদরা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এক সাংসদের বক্তব্যে আধিবেশনে হাতাহাতির উপক্রম হয়।
বিএনপির সেই সাংসদের বক্তব্য ও আচরণের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা মত বিনিময় সভায় বলেন, “এতো অশ্লীল ভাষায় একজন মহিলা কথা বলতে পারে- সেটা ভাবাই যায় না।”
গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কাজী জাফর উল্যাহ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ও দীপু মনি, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সাবেক সেনা প্রধান কে এম শফিউল্লাহ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ছাড়াও জেলার চারজন সাংসদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী এবং আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।