ইউক্রেনে গম ও কম্বোডিয়ায় ধান চাষের উদ্যোগ সরকারের

ইউক্রেনে গম ও কম্বোডিয়ায় ধান চাষের উদ্যোগ সরকারের

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদেশের মাটিতে চাষবাসের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জমি খোঁজা হচ্ছে মধ্য এশিয়ার দেশ ইউক্রেন থেকে সুদুর আফ্রিকার দক্ষিণ সুদান পর্যন্ত। এজন্য বেসরকারি পর্যায়ের কোনো উদ্যোগকেও স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সরকার।

বিশ্বের দেশে দেশে অনেক জমি পড়ে আছে যাতে আবাদ করে ফসল ফলানো সম্ভব। সরকার সেইসব জমির খোঁজ করে তাতে আবাদের জন্য করণীয় উদ্যোগ নিতে সক্রিয় রয়েছে বলেই জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।

এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে আলাপচারিতা অনেকদুর এগিয়েছে বলে সূত্রটি বাংলানিউজকে জানায়। ওই দেশে গম চাষের জন্য উপযোগী জমি পাওয়া গেছে আর সরকার বিষয়টিতে যথেষ্ঠই আশাবাদী। এছাড়াও সরকার কম্বোডিয়ায় ধান চাষ ও আফ্রিকার উপ-সাহারা অঞ্চলেও একই ধরনের চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে।

১৬ কোটি মানুষের দেশে চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ায় বিদেশে জমি লিজ নিয়ে চাষের এ উদ্যোগের কথা একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, দেশে চাষযোগ্য জমি কম, অপুষ্টি একটি প্রধান সমস্যা আর বিশ্ব বাজারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম, এ অবস্থায় দেশের বাইরে জমি চাষের সুযোগ পেলে সরকার অবশ্যই তা গ্রহণ করবে।’

বেসরকারি কোনো উদ্যোগকেও সরকার সব ধরনের উৎসাহ দেবে বলে জানান আবদুর রাজ্জাক।

বিশ্বে মাথাপিছু ফসলী জমির পরিমানের হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নীচের কাতারে। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জনে ৫৪ হেক্টর জমি ছিলো। বছর বছর ১ শতাংশ করে কমছে আবাদী জমির পরিমান। অন্যদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে ১.৬ শতাংশ হারে।

এরই মধ্যে দেশের আবাদী জমির উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার ১৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে উৎপাদনের মাত্রাও কমছে দিন দিন।

এমন পরিস্থিতিতেই সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে জমিচাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরাসরি জমি লিজ নিয়ে এসব জমিতে ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করবে সরকার।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আন্তুর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এক দেশের সরকার অন্য দেশে গিয়ে আবাদ করার এই উদ্যোগকে ক্ষতিকর মনে করছেন না। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কৃষিব্যবসায় বিনিয়োগ বিষয়ক কনাসালট্যান্ট কার্ল আটকিন একটি সংবাদমাধ্যমকে সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজটি করা গেলে তা উভয় পক্ষের জন্যই উইন-উইন হতে পারে।’

এক্ষেত্রে তিনি জমি চাষে স্থানীয় জনশক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় অধিবাসীদের ক্ষেপিয়ে তুলে কোনোভাবেই কাজটি সুসম্পন্ন করা যাবে না। এ ধরনের লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে তা অবশ্যই ৫ থেকে ১০ বছর কিংবা তারও বেশি সময়ের হতে হবে বলেও মত দেন আটকিন।

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মিনজেন-ডিক। তিনি বলেন, বিদেশের হাতে ফসলী জমি চাষের জন্য ছেড়ে দেওয়া নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করবে। তার মতে, সাধারণত সরকারি অব্যবহৃত জমিই লিজ দেওয়ার সুযোগ হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওইসব জমি কোনো না কোনোভাবে নি¤œআয়ের মানুষেরা কিছুটা আইন বহির্ভূতভাবেই ভোগদখল করে। তাদেরকে উচ্ছেদ করা কষ্টসাধ্য হবে।

আর তাছাড়া এ ধরনের জমি চাষে খরচ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পড়বে বলেই তিনি মনে করেন।

তবে আন্তর্জাতিক ওই সংবাদমাধ্যমটিকে বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, তিনি মনে করেন বিদেশের মাটিতে ফসল ফলানোর খরচ খাদ্য আমদানিবাবদ খরচের চেয়ে কম পড়বে।

এ নিয়ে সরকারের কোনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ রয়েছে কিনা তার উত্তরে খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য ‘নেই’ বলেই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, খাদ্য আমদানীর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বেধে দেওয়া দরের হেরফের করা যায় না, যা বহন করা অনেকক্ষেত্রেই বাংলাদেশের জন্য হয়ে ওঠে দুষ্কর। কিন্তু সে তুলনায় বিদেশে জমি পাওয়া গেলে তাতে কেবল ফসল উৎপাদন ও তা দেশে আনার খরচই পড়বে যা আমদানী খরচের চেয়ে কম হবে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর