বড় বড় ফাস্ট ফুড তথা খাদ্য ও পানীয় কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি পণ্য সম্পর্কে ভোক্তাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে।
সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই) একথা বলেছে। সিএসই’র মতে- বেশ কিছু নামী কোম্পানি তাদের তৈরি খাদ্য ও পানীয়কে ০% চর্বি (ট্রান্স-ফ্যাট বা অপরিনিষিক্ত চর্বি) সমৃদ্ধ বললেও বাস্তবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেসব খাবারে চর্বির উপস্থিতি আছে বেশ ভালো পরিমাণেই।
বেসরকারি সংস্থা সিএসই জানায়, জনপ্রিয় জাংক ফুডগুলোতে অধিক মাত্রায় চর্বি, লবণ ও চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব খাবার যারা নিয়মিত খায় তাদের ডায়াবেটিস ও স্থূলতায় (ওবেসিটি) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ভারতীয় এনজিও সিএসই সেদেশের ১৬টি জনপ্রিয় জাংক ফুড কোম্পানির খাদ্যপণ্য পরীক্ষার ফলাফল সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে। নামীদামী এসব কোম্পানি ও পণ্যের মধ্যে রয়েছে- কেএফসি, ম্যাগি(নেসলে), টপ রেমন নুডল্স, ম্যাকডোনাল্ডস, হলদিরাম প্রভৃতি।
এফএসএসএআই (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) এর অনুসৃত বিধি মোতাবেক- খাদ্যদ্রব্যকে তখনি ট্রান্স-ফ্যাট ফ্রি বলা যায় যখন তাতে অপরিনিষিক্ত চর্বির পরিমাণ শতকরা ০.০২ এরও নিচে থাকে। সিএসই’র পরীক্ষায় বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের খাদ্যে ট্রান্স-ফ্যাট উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ট্রান্স-ফ্যাট ধমনীতে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আর বাড়তি মাত্রায় লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। সিএসই জানায়, আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু কিছু খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স-ফ্যাট, লবণ আর চিনির মাত্রা এত বেশি যে এগুলো খেলে বয়ষ্করা তো বটেই, তরুণরাও নানান রোগ-শোকে আক্রান্ত হতে পারে।
সিএসই’র অভিযোগ- ওইসব কোম্পানি তাদের খাদ্যপণ্য তৈরিতে কোন কোন উপাদান ব্যবহার করে তাও পরিষ্কার করে বলে না। ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউট্রিশন(এনআইএন) এর মতে, একজন মানুষের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম লবণ যথেষ্ট। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও বা হু)’র মতে এর পরিমাণ আরও এক গ্রাম কম অর্থাৎ ৫ গ্রাম। সে হিসেবে ম্যাগির ৮০ গ্রাম পরিমাণ জাংক ফুডের একটি প্যাকেটে লবণ থাকে ৩.৫ গ্রাম। এটা হচ্ছে সারাদিনে গ্রহণযোগ্য মাত্রার ৬০%।
হু’র মতে- কুল এনার্জি’র শতকরা সর্বোচ্চ ১ ভাগ নেওয়া যেতে পারে ট্রান্স-ফ্যাট থেকে। এভাবে প্রতিদিন একজন পুরুষ ২.৬ গ্রাম, নারী ২.১ গ্রাম ও শিশু ২.৩ গ্রাম ট্রান্স-ফ্যাট নিতে পারে। সিএসই’র পরীক্ষায় দেখা যায়, টপ রেমন সুপার নুডলসে ১০০ গ্রামে ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ ০.৭%। যদিও কোম্পানিটি বিজ্ঞাপনে ও অন্যান্য মাধ্যমে ঘোষণা করে আসছে যে এই পণ্যটি ট্রান্স-ফ্যাট ফ্রি। অপর প্রতিষ্ঠান হলদিরাম তদের জনপ্রিয় পণ্য আলু ভুজিয়া কেও ট্রান্স-ফ্যাট মুক্ত দাবি করে থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেছে এতে প্রতি ১০০ গ্রামে ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ ২.৫%। পেপসিকো কোম্পানি তাদের জনপ্রিয় চিপ্স লেইস (স্ন্যাক স্মার্ট) কেও ট্রান্স-ফ্যাট মুক্ত দাবি করে। তবে পরীক্ষায় (ফেব্রুয়ারি ২০১২) দেখা গেছে পেপসিকো’র ওই চিপসের প্রতি ১০০ গ্রামে ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ ৩.৭ গ্রাম।
তবে সংশ্রিষ্ট কোম্পানিগুলো বলছে ভিন্ন কথা। এ ব্যাপারে পেপসিকো’র বক্তব্য হচ্ছে- ভারতে আমাদের সবগুলো প্রোডাক্ট-ই অনুমোদিত পণ্যমান মোতাবেক তৈরি। সে হিসেবে লেইস, আংকেল চিপ্স, কুড়কুড়ে প্রভৃতি খাদ্যপণ্য ট্রান্স-ফ্যাট মুক্ত।
ম্যাগি’র প্রস্তুতকারী নেসলে বলছে, আমরা সিএসই’র কাজের কদর করি। কিন্তু ম্যাগি একটি হাল্কা খাবার। এটি ‘ডাইভার্সিফাইড ব্যালেন্সড ডায়েট’ এর অংশ হিসেবে গ্রহণ করা যায়।