‘বিদ্যালয়বিহীন এক হাজার ৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের ব্যয় ও সময় দুটিই বেড়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসেনি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখন পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মিত স্কুলে একজন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রেষণে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্বল্প সংখ্যক স্কুল চালু করা হলেও শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, দেশের প্রায় ২ হাজার ১০০ গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। দুর্গম পাহাড়ি, হাওড়, চর ও উপকূলীয় এলাকায় এর সংখ্যা বেশি। ফলে এসব দুর্গম এলাকার শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নে বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুনে ‘বিদ্যালয়বিহীন এক হাজার ৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
প্রকল্পের তথ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, এলজিইডির দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১১শ’ ২১টি স্কুলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় দেড়শ’ স্কুল নির্মাণ কাজ চলছে এবং শতাধিক স্কুল নির্মাণের জন্য টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ৮৩৮ কোটি ৬৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০৫ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রকল্পের অধীনে পার্বত্য এলাকায় নির্মাণ শেষ হওয়ার স্কুলে অতি সামান্য সংখ্যক শিক্ষক পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়োগ দিয়েছে। তবে সমতল ভূমিতে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া স্কুলে সরাসরি কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে ডেপুটেশনে (প্রেষণ) কিছু শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্কুলগুলো চালু করা হয়েছে। তবে তার সংখ্যা তাদের কাছে নেই।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, ৬৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১৪টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু প্রতি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক ও ৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদে জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো পদ অনুমোদনের চেষ্টা করছে। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগ কার্যত ঝুলে আছে।
একাধিক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরনো সরকারি ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ ৫-৭ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করায় এ সংকট আরো প্রকট হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদশূন্য। এ অবস্থায় নতুন নির্মিত স্কুলে প্রেষণে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া কঠিন। তারপরেও পুরাতন স্কুল থেকে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে নতুন স্কুলগুলো চালু করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে উভয় স্কুলের পাঠদান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে তারা দ্রুত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বিদ্যালয়বিহীন এক হাজার ৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক মুইজুল শাহান খান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন স্কুল নির্মাণে প্রথমে জমি পাওয়া নিয়ে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ অনেকেই স্কুলের জন্য বিনামূল্যে জমি দিতে চায়নি। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন বিনামূল্যে জমি দান করায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। তবে এখনও কিছু গ্রামে জমি পাওয়া নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগছে। প্রকল্পের কাজ শুধু স্কুল নির্মাণ করে দেয়া শিক্ষক নিয়োগ দেয়া নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।