‘পানি লন পনেরো, ভেতরে ত্রিশ। ঠইকেন না, ঠইকেন না। পানি লইয়্যা যান।’ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার গেটের বাইরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে এভাবেই ফেরি করে পানি বিক্রি করছে ১২ বছরের বালিকা রুমি।
ওর এক হাতে ৫শ মিলি লিটারের পানির বোতল, অন্য হাতে টাকা। ব্যবসা ভালো হওয়ায় বেশ ফুরফুরে লাগছিল। পায়ের কাছে আরো একটি বোতল পানির প্যাকেট। বাকি প্যাকেটগুলো পাশেই একটি মাইক্রোবাসের নীচে লুকিয়ে রাখা। মেলা কর্তৃপক্ষ আর পুলিশের ভয়েই ওখানে রাখতে হয়েছে। পুলিশ দেখতে পেলেই ব্যবসায় লালবাতি। সকালে ১২টি বোতলের একটি প্যাকেট কেড়ে নিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ।
মেলার বাইরে কোনো খাবারের দোকান নেই, তাই পানি বিক্রি নিষেধ। অমন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ওরা ফেরি করছে। তবে পুলিশকে দুই এক বোতল পানি বকশিশ দিলেই কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারে ওরা।
মঙ্গলবার দুপুরে মেলার গেটে কথা হয় পানির ফেরিওয়ালা রুমির সঙ্গে। ভয় আর ব্যস্ততায় সময় দেয়াই ওর জন্য মুশকিল। বিক্রির ফাঁকে ফাঁকেই চুপিসারে কথা। বলছিল, ‘মেলা শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই এখানে পানি বিক্রি করছি। অনেক সমস্যা। পুলিশ দাঁড়াতে দেয় না। মেলার লোকজন এসে সব কেড়ে নিয়ে যায়। মারপিটও করে। তবুও আসি। এখানে বিক্রি ভালো। সকাল থেকে ২’শ বোতল বিক্রি করেছি। রাত পর্যন্ত আরো বিক্রি হবে।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজলী নামের আরেক ফেরিওয়ালা রুমির কথায় সায় দিতে এগিয়ে এলেন। কাজলী জানায়, ‘বেশি পরিমাণ পানি বিক্রির রহস্যের কথা। বলছিলেন, ‘ভিতরে ডাকাতি হয়। গেট পার হলেই হাফ লিটারের এক বোতল পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একই বোতল আমরা বেচতেছি ১৫ টাকায়। ভিতরের খাবারে আগুন। যে একবার খাইছে, সে আর অমন দামে ফের খায় না। এ কারণে অনেকেই আমাদের কাছ থেকে পানি কিনে নিয়ে ভিতরে যায়। আবার কেউ কেউ বাইরে এসে কিনে নেয়। ডাবল দামে কিনে ঠকবে কেন?
রুমি আর কাজলীর কথার সত্যিই প্রমাণ মেলে বাণিজ্য মেলার ভিতরে। খাবারের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এবারের মেলায়। অভিযোগ ছিল আগের বছরগুলোতেও। বাইরে যে খাবার ৫০ টাকায় মেলে, মেলায় তা ১৫০ টাকাতেও মেলে না। এক বাটি হালিম খেলে সার্ভিস চার্জসহ এক থেকে দেড়শ টাকা গুণতে হচ্ছে। প্রতিটি খাবার পণ্যের দাম-ই সেখানে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সব খাবার হোটেলেই অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে। যেমন, স্টার কাবাব অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজে একটি বিফ শিক কাবাব ২৬০ টাকা। মেনুতে খাবারের প্যাকেজের তালিকা থাকলেও তা ‘নেই’ বলে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামের প্যাকেজ বিক্রি করা হয়। এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানি বিক্রি করছে ২৯০ টাকা। বিফ বিরিয়ানি ২৭০ টাকা। একটি নান রুটি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা। যেখানে বিফ তেহারি ৯০, চিকেন ফ্রাইড রাইস ১৫০ টাকায় বিক্রি করার কথা। এটি এ বছরের মেলার রেস্টুরেন্ট ও ফুড স্টলের খাবারের মূল্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বেশির ভাগ টেবিলে খাবারের মূল্য তালিকা নেই।
মেলায় ঘুরতে আসা সুমন নামের এক দর্শনার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ তো রীতিমত ডাকাতি। দু’জনে হালিম খেয়ে বিল দিলাম ৬শ টাকা। সার্ভিস চার্জ নাকি কি চার্জসহ এই বিল ধরিয়ে দিল। এরকম একটি মেলা, অথচ রাষ্ট্রের কোনো নজরদারি নেই। মানুষ খেতে বসলেই বোকা হয়ে যাচ্ছে। আজব। ’
খাবারের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়, স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ক্যাশ ম্যানেজার বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইপিবির (রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো) তালিকা অনুযায়ী দাম রাখা হচ্ছে। কিছু খাবারের দাম বাড়তি। বোঝেনইতো, মেলায় একটা বাড়তি খরচা আছে না!