নওগাঁয় মশা তাড়ানোর যন্ত্র আবিষ্কার

নওগাঁয় মশা তাড়ানোর যন্ত্র আবিষ্কার

1996দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে মাত্র কয়েকশ টাকা খরচ করে মশা তাড়ানোর একটি ইলেকট্রিক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন নওগাঁর যুবক এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু। দীর্ঘ ৪ মাসের গবেষণায় তিনি সফলভাবে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন ‘রাজু মসকিউটো রিপেলার মেশিন’।

নওগাঁ শহরের দুবলহাটী রোডে হাট-নওগাঁ আলহাজ্ব ইদ্রিস আলী ইলেকট্রিক অ্যান্ড ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব তৈরি প্রযুক্তিতে ফেলনা জিনিসপত্র ব্যবহার করে যন্ত্রটি আবিষ্কার করছেন। মশা তাড়ানোর যন্ত্রটি বাজারজাতের জন্য ঢাকা ডিপার্টমেন্ট অফ প্যাটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রের্ড মার্কস থেকে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

মশা নিধনে প্রযুক্তিতে কতো কিছু না তৈরি করা হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। মশা নিধনে বাজারে বিভিন্ন নামে রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে কয়েল। বর্তমানে বাজারে রকেট, এক্সট্রা পাওয়ার, বোস্টার, লিজার্ড মেগা, বাংলা কিলার, এক্সট্রা পাওয়ার ব্ল্যাক, ফাইটার, নাইটগার্ড, নাইট এঙ্গেল, বস সুপার, ক্রস ফায়ার, এটাক কিং, পোলার মেগা, সোলার, এক্সট্রা পাওয়ার এবং গুড নাইট কয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে যে কয়েলই হোক না কেন সবই পরিবেশ এবং স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন তিনি।

তবে পরিবেশ এবং স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন একটি যন্ত্র গত ৪ মাসের গবেষণায় আবিষ্কার করেন এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু। বাজারে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি ছোট স্বল্প মূলের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে যন্ত্রটিতে। এছাড়া অন্য কোনো উপাদান নেই। যন্ত্রটিতে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, পেন্সিল ও ঘড়ির রির্চাজেবল ব্যাটারি, একটি ছোট সার্কিট, শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যান্ড পাইপ, টেপ, আঠা এবং ব্যাটারি চার্জের জন্য একটি চার্জার ব্যবহৃত হয়েছে।

ঘরের মধ্যে ব্যবহারের জন্য যন্ত্রটিতে একটি সাড়ে ৯ ভোল্টের মোটর এবং সাড়ে ৩ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। আর বাইরের পরিবেশের জন্য সাড়ে ৯ ভোল্টের মোটর এবং সাড়ে ৬ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই ব্যাটারির সাহায্যে এটা প্রায় ৬/৮ ঘণ্টা চালানো সম্ভব।

একটি ঘরে যন্ত্রটি চালু করার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর কাজ শুরু হয়। ঘর যত বড় হবে সময় ততো বেশি লাগবে। তবে একটা যন্ত্র দিয়েই মশা তাড়ানো সম্ভব। যন্ত্রটি ঘরের দরজা-জানালা খোলা বা বন্ধ সব অবস্থাতেই সমানভাবে কার্যকর।

‘রাজু মসকিউটো রিপেলার মেশিনটি ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া নওগাঁ শহরের জয় টেলিকম অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টারের মালিক ফারুক হোসেন জুয়েল, হাট-নওগাঁ মহল্লার প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়ার আব্দুস ছাত্তার, একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হুমায়ন কবিরসহ অনেকে।

ফারুক হোসেন জুয়েল জানান, চারজনের পরিবারে আগে প্রতিদিন বাড়িতে গড়ে ৭ থেকে ১০ টাকার কয়েল পুড়িয়ে খরচ হতো। ‘রাজু মসকিউটো রিপেলার মেশিন’ আবিস্কারের পর পরীক্ষামূলক দুইদিনের জন্য ব্যবহার করতে দেন রাজু। ঘরের মধ্যে ব্যবহার করে ওই দুইদিন তার কোনো কয়েল ব্যবহার করতে হয়নি। এমনকি কোন মশারও কামড় খেতে হয়নি।

এছাড়া আব্দুস ছাত্তার বলেন, ঘরের মধ্যে মেশিনটি চালু করার ১০/১৫ মিনিট পর থেকে একটি মশাও দেখা যায়নি। মশারিও টাঙাতে হয়নি। আব্দুস ছাত্তার, সেলস ম্যানেজার হুমায়ন কবিরসহ যন্ত্রটি ব্যবহারকারীরা মনে করেন, যন্ত্রটি শতভাগ মশা তাড়ানোর কাজ করছে।

প্রস্তুতকারী এসএম ইব্রাহীম হোসেন রাজু বলেন, মশার শরীর পানি দিয়ে তৈরি। এই চিন্তা থেকেই এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করা হয়েছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে আল্টা-সাউন্ড নামে শব্দ বা কম্পন (শোনা যাবে না) উৎপন্ন হবে। যন্ত্রটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালু থাকলেও এর শব্দে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোনো প্রভাব থাকবে না।

আর এই আল্টা-সাউন্ড নামে শব্দ বা কম্পনে মশার শরীরেও কম্পন তৈরি হবে। একটি নির্দিষ্ট জায়গা/এলাকা জুড়ে মশা না মরে পালিয়ে যাবে বা মশা থাকবে না। মশা তাড়ানোর জন্য যন্ত্রটিতে কোনো প্রকার রাসায়নিক উপাদান বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়নি। যন্ত্রটি পরিবেশ দূষিত হওয়ার মতো কোনো প্রকার দুর্গন্ধ ছড়ায় না।

তিনি আরও জানান, যন্ত্রটি কার্যকরী, বিভিন্ন আকারের, স্থানান্তরযোগ্য ও নিরাপদ। ঘরের বাইরে, গরুর গোয়ালে, বাগানে, খোলা জায়গায় ব্যবহার উপযোগী। স্বাভাবিকভাবে যন্ত্রটি বছরের পর বছর চলবে। তবে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে এবং মোটরের ত্রুটি হলে পরিবর্তন করতে হবে।

প্রতিমাসে যন্ত্রটি একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্বের চেয়েও কম বিদ্যুৎ খরচ হবে। বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১শ টাকা থেকে ৫শ টাকা। এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

শহরের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য এর আগে `বাড়ীর বুড়ি` নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন রাজু।

জেলা সংবাদ