বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের প্রতিবাদে আগামী ৪ এপ্রিল বুধবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩১ মার্চ নয়াপল্টনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হরতালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারদলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যর ক্রমাগত উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আগামী ৪ এপ্রিল হরতালের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩১ মার্চ নয়াপল্টনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কৌশলে জবাব এড়িয়ে বলেন, ‘বিষয়টি গোপন করার কিছু নেই। হরতালের সিদ্ধান্ত হলে আপনারা তো জানতেন।’
এদিকে, বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই হুট করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য আজকের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে কর্মসূচির ধরন কী হবে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’
কী ধরনের কর্মসূচি আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচির ধরন অবশ্যই কঠোর হবে।’
হরতাল আসবে কি না জানতে চাইলে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘দেখা যাক।’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এপ্রিল ও মে মাসব্যাপী কি কি কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সম্ভাব্য কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন প্রক্রিয়ায় যত কর্মসূচি আছে তার সবক`টি নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’
হরতাল আসছে কি না জানতে চাইলে নেজামী বলেন, ‘আসতে পারে। তবে কোনো কিছুই কনফার্ম না।’
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের ও ইসলামী ঐক্যজোট ঢাকা মহানগর শাখার আমীর আবুল কাশেম।
এর আগে বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান মিয়া ও ঢাবি শিক্ষক সদরুল আমিনের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
সূত্র মতে, আগামী ৪ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা না থাকায় বুধবারের বৈঠক থেকেই হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার চারদলীয় জোটের বৈঠকে বিষয়টি আরো পাকাপোক্ত হয়।
সূত্র জানায়, কেবল হরতালই নয়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এপ্রিল মাস জুড়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ কর্মসূচির ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে।
সূত্রমতে, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে আগামী ১১ এপ্রিল দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল করার দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। তবে নীতিগতভাবে নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে খালেদা জিয়া বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এছাড়া আগামী ১৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত নতুন জোটের নাম ঘোষণার ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
রাত পৌনে ৯টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টার দিকে। বৈঠক শেষে চারদলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা অবশেষে রাত ১১টার দিকে যার যার কর্মস্থলে ফিরে যান।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচিতে বাধা, নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২৯ মার্চ দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নান কর্মসূচি থাকায় মাত্র তিনদিন আগে ২৫ মার্চ রাতে হরতাল প্রত্যাহার করেন খালেদা জিয়া।
এরপর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার পথে একাধিকবার বাধা প্রদান ও হোটেল রূপসী বাংলায় জিয়াউর রহমানের ওপর লেখা সাংবাদিক শফিক রেহমানের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বাতিল করায় পুনরায় হরতালের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এরপর হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে বিএনপি ও চারদলীয় জোট।