`চারদিকে মানুষের ব্যাপক সমাগম। ভিড়ের মধ্যে অামিই একমাত্র নারী ছিলাম। এক মিনিটের মধ্যে চারদিকে থেকে একদল মানুষ আমাকে ঘিরে ফেলে; তাদের সবার হাত আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা স্পর্শ করতে থাকে, পরে আমাদের দলের একজন মোটাসোটা ব্যক্তি সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেন।`
২০০৭ সালে ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিবিসির সাবেক শিক্ষানবিশ উপস্থাপক সায়রা খান পাকিস্তানে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজে যান। সেখানে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জন্মদিন উদযাপনের একটি ফুটেজ ধারণের জন্য জনসমাগমের মাঝে ঢুকে পড়েন সায়রা। এরপরেই একদল মানুষের যৌন নির্যাতনের শিকার হন বিবিসির সাবেক এই সাংবাদিক।
সায়রা খান সে কথাই তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলে লেখা এক নিবন্ধে। তার বাবা-মা পাকিস্তানি নাগরিক। তিনিও বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানে। সায়রা বলেন, আমি আঁতকে উঠেছিলাম; এ রকম কিছু মানুষের সঙ্গে আমি বেড়ে উঠেছি ভাবতেই নিজের প্রতি রাগ হচ্ছিল।
সাবেক এই টেলিভিশন উপস্থাপক বলেন, শারীরিক নির্যাতনের পরও তিনি ওই তথ্যচিত্র ধারণের কাজ চালিয়ে যান। সায়রা বলেন, ২০০৭ সালে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য বিবিসির পক্ষ থেকে আমাকে পাকিস্তানে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এর মধ্যে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জন্মদিন উদযাপনের একটি ফুটেজ ধারণের কাজ চলছিল।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ টিমের আমার সব সদস্যরা স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন; কেননা ওই স্কয়ারের মধ্যে হাজার হাজার পাকিস্তানি জমায়েত হয়েছিলেন এবং আমি তাদের মাঝ থেকে রিপোর্ট করছিলাম। খান বলেন, আমি দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম; সে সময় আমি মনে করেছিলাম আমার কিছুই হয়নি।
সেদিন অত্যন্ত নম্র পোষাক পরেছিলেন তিনি। সায়রা বলেন, আমি একেবারেই গ্রাম্য সালোয়ার কামিজের সঙ্গে ওড়না দিয়ে শরীর আবৃত করেছিলাম, শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য মাথায় স্কার্ফও পরেছিলাম; এরপরেই বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিচালক ডেভিড আমাকে জনসমাগমের মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেন।
বিবিসির সাবেক এই শিক্ষানবিশ সাংবাদিক এ ঘটনা জন্য বিবিসিকে একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিবিসি সে সময় এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে। কেননা এশিয়া, আরব এবং আফ্রিকায় মানুষ এমন এক সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠে যেখানে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কথা বলা প্রয়োজন তবেই এটি পরিবর্তন হবে।