ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসন্দি গ্রামে শনিবার ভোরে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গণমুক্তি ফৌজের সামরিক শাখার প্রধান বিধান চন্দ্র বিশ্বাস (৪৫) নিহত হয়েছেন।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১টি সাটারগান ও বেশ কিছু গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব।
নিহত বিধান চন্দ্র বিশ্বাস ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মুনুড়িয়া গ্রামের বাটুল বিশ্বাসের ছেলে।
র্যাব-৬ এর ঝিনাইদহ ক্যাম্পের উপ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এম আশরাফ আলী জানান, শনিবার ভোর ৪টায় সদর উপজেলার ফুরসন্দি গ্রামে গোলাগুলির শব্দ শুনে পুলিশ ও র্যাব যৌথভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
তিনি আরও জানান, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ফুরসিন্দ গ্রামের একটি মেহগনি বাগানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে সন্ত্রাসীরা র্যাব ও পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়।
এ সময় আত্মরক্ষার্থে র্যাব ও পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলে এক ব্যাক্তিকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় গ্রামবাসী তাকে চরমপন্থি নেতা বিধান বিশ্বাস বলে সনাক্ত করেন।
শনিবার ভোর ৫টার দিকে আহত বিধান চন্দ্রকে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঝিনাইদহ সদর থানার উপ-পরিদর্শক এজাজ হোসেন জানান, এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
বিধান চন্দ্রের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ বাংলানিউজে ‘মাগুরায় পুলিশের মোষ্ট ওয়ান্টেড বিধানের খবর জানতে চায় তার পরিবার’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৯০ দশকে সর্বহারা পার্টিতে বিধান বিশ্বাসের হাতে খড়ি। ১৯৯৭ সালে আরেক চরমপন্থি নেতা ও বিধানের গুরু সন্যাসী বিশ্বাসকে হত্যার মাধ্যমে লাইম লাইটে আসে বিধান বিশ্বাস।
আন্ডার ওয়ার্ডে বিধানের নাম ছড়িয়ে পড়ে তার এবং সে সময় বাংলাদেশ সর্বহারা পার্টিতে তার নাম ছিল কমরেড মিন্টু।
১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাধারণ ক্ষমার আওতায় বিধান বিশ্বাস আত্মসমর্পন করে ৫ বছর কারাভোগ করেন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের সামরিক শাখা গণমুক্তি ফৌজে যোগ দেন।
২০০৪ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ভারতে চলে যান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তিনি আবারও গ্রেফতার হয়ে ৪৭ মাস কারাভোগ করেন।
পুলিশ আরও জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। দেড় বছর জেলে থাকার পর ২০১০ সালের শেষ দিকে মুক্তি পেয়ে নিজ নামে বাহিনী গঠন করেন বিধান।
ঝিনাইদহ ও মাগুরার সরকার দলীয় কয়েকজন নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে সন্ত্রাসী বিধান বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজী, অপহরণ ও দাঙ্গা ফ্যাসাদ সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে পুলিশের কাছে।