অব্যাহত লোকসানের মুখে অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল বেসরকারি এয়ারলাইনস জিএমজির কার্যক্রম। আগামী শুক্রবার থেকে জিএমজির সব ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এর কর্মীদের একটি বড় অংশকে চাকরি থেকে বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে।
তবে আগামী এক বছরের মধ্যেই নতুন আঙ্গিকে জিএমজি যাত্রীদের সেবায় সামনে হাজির হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জিএমজি এয়ারলাইনসের পরিচালক (কাস্টমার কেয়ার ও মার্কেটিং) আসিফ আহমেদ তাদের সব ফ্লাইট বন্ধ করার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, তারা সাময়িকভাবে ফ্লাইটসমূহ বন্ধ করেছেন। খুব শিগগিরই আবার তারা তাদের সব কার্যক্রম শুরু করবেন।
কবে নাগাদ পুনরায় তাদের ফ্লাইট চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না। কয়েকদিনের মধ্যে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।’
এক বছরের মধ্যে তারা পুনরায় ফ্লাইট শুরু করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আশা করছি এক বছরের আগেই আবার অপারেশনে আসতে পারবো।’
জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী সঞ্জীব কাপুর বলেন, ‘নতুন কৌশলে যাবার ফলে, আমাদের ফ্লাইট কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করা হচ্ছে, যা আগামী ৩০ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ ডেলিভারি, নতুন আকারের কর্মশক্তি এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিতে আমাদের নিজেদের তৈরি করছি।’
জিএমজি এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দু’ মাস ধরে কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। এমনকি তাদের ওভারটাইম বা অন্যান্য ভাতাও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় কর্মীদের কেউ কেউ এরই মধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। যারা এখন চাকরিতে রয়েছেন, তারা অন্য এয়ারলাইনস কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির চেষ্টা করছেন।’
সূত্র জানায়, একের পর এক রুট বন্ধ হয়ে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও ঢাকা-কলকাতা রুটে অনিয়মিতভাবে ফ্লাইট চলছে।
জিএমজি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘সাময়িক বন্ধের সময় এয়ারলাইনস সেলস অফিসের মাধ্যমে সব ক্রেতাকে বিক্রি করা টিকিটের পুরো অর্থ ফেরত দেওয়া হবে এবং এয়ারলাইনসের কর্মীরা শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন।’ তাছাড়া এয়ারলাইনসটি সব এয়ার অপারেটরস সার্টিফিকেট, ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সিগুলো ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক, স্টেক হোল্ডার এবং যাত্রীদের সহায়তায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সঞ্জীব কাপুর বলেন, অস্বাভাবিক হারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে জিএমজি এয়ারলাইনস নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠানটি কাঠামোগত এবং ব্যবসা পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনছে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মের এয়ারক্রাফট দিয়ে স্থানীয় ও আঞ্চলিক লাভজনক, সম্ভাবনাময় রুটগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
সঞ্জীব কাপুর এই নতুন পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, বিগত বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলো সরকারের সহায়তা, অবস্থানগত সুবিধা, বৃহৎ পরিসর এবং কম খরচের (বিশেষ করে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও তুলনামূলক কম কর) কারণে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেছে। এই অগ্রগতি এশিয়া এবং পশ্চিমা দেশের অনেক এয়ারলাইনসকেই তাদের কৌশল পুনর্মূল্যায়ন ও যে রুটগুলোতে তুলনামূলকভাবে প্রতিযোগিতা সমান সে সমস্ত রুটে দৃষ্টি দিতে বাধ্য করেছে। এর ফলে জিএমজি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং নিকটস্থ পূর্ব এশিয়ার রুট এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু নির্বাচিত রুটে ন্যারো বডির উড়োজাহাজের মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালানার পরিকল্পনা করছে।
জিএমজি সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জিএমজি এয়ারলাইনস ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা বাদ দেওয়া হচ্ছে। বোয়িং ৭৬৭ এর পরিবর্তে নতুন প্রজন্মের ন্যারো বডির সংযোজন করে নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট পরিচালনা নিশ্চিত করা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এ পরিকল্পনায়। এছাড়া এমডি ৮০ উড়োজাহাজকেও ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বাদ দেওয়া হবে। আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে ড্যাশ ৮ উড়োজাহাজকেও সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রাখা হচ্ছে।