৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আবারো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে। একই দিনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এদিকে সরকারের দুই বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে দেশের বড় দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। ৫ জানুয়ারিতে কি ঘটবে এ প্রশ্ন এখন জনমনে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের বড় দুই শক্তির পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ। এরকম সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলে মত দিয়ে তারা বলেন, এমন সংস্কৃতি চলতে থাকলে নিজেদের মধ্যে বিভাজন আরো বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি রাজধানী দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে দিনটি তারা উদযাপন করবে। অপরদিকে, বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। এ লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে এখনো অনুমতি পায়নি দলটি।
এ প্রসঙ্গে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমাদের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার বিকেলে ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়েছিল। সেখানে ডিএমপির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হলেও সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে ওই কর্মকর্তা কিছু বলেননি।’
বিএনপির কর্মসূচি পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। দলটি ওইদিন রাজধানীর ১৮টি পয়েন্টে সমাবেশ, শোভাযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে। একই কর্মসূচি পালিত হবে দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায়ও।
আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর পূরবী সিনেমা হল, শ্যামপুর-জুরাইন রেলগেট, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী মাঠ, বাড্ডা-রামপুরা পেট্রল পাম্প, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোড, মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর, লালবাগ, গুলশান, সূত্রাপুর, তেজগাঁও, সবুজবাগ-খিলগাঁও, উত্তরা, কামরাঙ্গীর চর, মোহাম্মদপুর টাউন হল, কাফরুল, গুলিস্তান-বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, বনানী-মহাখালী ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে, সমাবেশের অনুমতি না পেলেও সমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়েছেন যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। শনিবার নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় তিনি দলের নেতাকর্মীদেরকে সমাবেশ সর্বাত্মকভাবে সফল করার আহ্বান জানান।
এদিকে গত বছরের ৫ জানুয়ারি গুলশানের নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় টানা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সে সময় টানা ৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধে দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা হয়। পরবর্তীতে ঘোষণা ছাড়াই সেই কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটে।
তবে সরকারের দুই বছর পূর্তিতে আবারো ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণা করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বলেন, চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরবারকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসতে হবে। তবে গত বছর যে রকম সহিংসতা হয়েছে এবছর একই কারণে সৃষ্ট সংকটে তেমন সহিংসতা হবে না বলে মনে করেন তিনি।