চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার খুললো

চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার খুললো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেছেন, যার মধ্য দিয়ে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) সঙ্গে বন্দর টোল রোডের সরাসরি সংযোগ ঘটলো।

ফ্লাইওভারসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছান। বিকেলে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ১৪ দলের এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে চট্টগ্রামকে সাজানো হয়েছে মনোরম সাজে। সড়কগুলো সাজানো হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে। পুরো শহরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সকাল থেকেই পলোগ্রাইন্ড মাঠের সমাবেশে জড়ো হতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেবে বলে আশা করছেন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টার পর হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম বন্দর হাইস্কুল মাঠে পৌঁছান। মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাকে স্বাগত জানান।

প্রথমেই ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অ্যাপ্রোচ সড়কসহ ১ দশমিক ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) সঙ্গে বন্দর টোল রোডের সংযোগ ঘটিয়েছে। এই সড়কটি চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন কাস্টমস ব্রিজ থেকে ফৌজদারহাট হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে মিশেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী যানবাহন কম সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছাতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এছাড়া এই ফ্লাইওভারের কল্যাণে বন্দর এলাকার যানজটও কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসেলিটেশন প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০ মাসের মধ্যে এর নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ।

৮২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মধ্যে ৩৭ কোটি টাকা দিয়েছে এডিবি। বাকি ৪৫ কোটি টাকা সরকার যুগিয়েছে।

ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় প্রায় চার হাজার নারী শ্রমিকের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ডরমিটরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সিডিএর নিজস্ব অর্থায়নে নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় তৈরি পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের জন্য এই ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে।

এরপর নগরীর ষোলশহর এলাকায় এলজিইডি ভবনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নগরীর নন্দনকানন এলাকায় বৌদ্ধ সমিতি পরিচালিত চট্টগ্রাম বৌদ্ধমন্দিরের পুণর্নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্পের আওতায় নন্দনকাননে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ মন্দিরের বর্তমান দ্বিতল ভবন ভেঙ্গে ১০ তলার আধুনিক একটি ভবন হবে।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি পরিচালিত এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। এতে উপসনালয়, বুদ্ধমূর্তি, ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার, মেডিটেশন সেন্টার, কনফারেন্স রুম, মিউজিশিয়াম, লাইব্রেরি, ফ্রি মেডিকেল সেন্টার ও ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা থাকবে।

বৌদ্ধ মন্দিরের অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউজে যান। সেখানে তিনি প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং পরে জেলার ঊর্র্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ে বসেন।

এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় তিনি যোগ দেন নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে ১৪ দলের সমাবেশে। সেখান থেকেই হাটহাজারী, দোহাজারী ও পটিয়ার তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রতিটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফার্নেস অয়েল নির্ভর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

এ সমাবেশ সামনে রেখে মঙ্গলবার রাত থেকেই পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও এর আশেপাশে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সমাবেশের বাইরে ও ভেতরে মোতায়েন করা হয়েছে আড়াইহাজার পুলিশ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বলেন, “চট্টগ্রামে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে পলোগ্রাউন্ডের এ সমাবেশ।”

বাংলাদেশ