একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫২ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে।
বুধবার মামলার সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। তাকে গত রোববার সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসতে সমন দেওয়া হয়েছিল।
ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর গত বছর ৩ জুলাই আদালতে দাখিল করা সম্পূরক চার্জশিটের এক নম্বর সাক্ষী। সম্পূরক চার্জশিটে মহিউদ্দিন খান আলমগীর ছাড়াও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮৩ জন সাক্ষী রয়েছে।
কিন্তু মামলার অন্যতম আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক দু’ পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক বিএনপি দলীয় ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ আগে এ মামলায় নেওয়া ৬১ জন সাক্ষীকে পুনরায় আদালতে হাজির করে জেরা করার আবেদন করেন।
এই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের আগে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রাখার আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। তারা বলেন, তাদের আসামিরা সম্পূরক চার্জশিটে আসামি হয়েছেন। আর ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়া হয়েছে সম্পূরক চার্জশিট হওয়ার আগে। এই সাক্ষীদের সাক্ষ্যও এই আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। তাই আইন অনুযায়ী তাদের সাক্ষ্য পুনরায় নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আইনজীবীরা বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যাও আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন।
আসামিপক্ষের ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পুনরায় নেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করেন স্পেশাল পিপি সৈয়দ রেজাউর রহমান। পুনরায় তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের প্রয়োজন নেই বলে তিনি জানান।
আদালত এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে আগামী ৯ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পুনরায় দিন ধার্য করেন।
এরপর মামলার পলাতক আসামি বর্তমান বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ পলাতক নন বলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. বোরহান উদ্দিন আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন। তিনি আদালতকে জানান, কায়কোবাদ বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি অসুস্থ থাকায় ২০১০ সালের ২২ মার্চ সংসদ থেকে ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৮ মার্চ তিনি আবার ছুটির আবেদন করেছেন। যা স্পিকার আরো ৯০ কার্যদিবস জন্য মঞ্জুর করেছেন। গত বছরের ৩ জুলাই যখন কায়কোবাদকে এ মামলায় জড়ানো হয় তখন তিনি সংসদ থেকে ছুটিতে ছিলেন। তাই তাকে পলাতক না দেখিয়ে তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক।
এরপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে তার পরিবারের পছন্দ অনুযায়ী সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুর রেজ্জাক খানকে আইনজীবী নিয়োগের আবেদন নাকচ হওয়ায় ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলে অ্যাড. সানাউল্লাহ মিয়া সময়ের আবেদন করেন।
এসব সম্পর্কে স্পেশাল পিপি রেজাউর রহমান বলেন, এই আসামি পলাতক তাই তার পক্ষে বক্তব্য রাখার সুযোগ নাই।
গত ১৮ মার্চ হত্যা মামলায় তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির সবার বিরুদ্ধে ও বিস্ফোরক মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বাকি ২২ আসামির বিরুদ্ধে আগের করা অভিযোগই বহাল রাখা হয়েছে।
পুরানো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী আদালতে এর বিচার চলছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বিচারক হিসাবে দায়িত্ব রয়েছেন।
গত বছরের ৩ জুলাই সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অতিরিক্ত আরো ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন।
আগের চার্জশিটে আসামি সংখ্যা ছিল ২২ জন। সম্পূরক চার্জশিটসহ বর্তমানে এ মামলার আসামি ৫২ জন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।