সব বাঁধা উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এখন অপেক্ষা শুধু বই উৎসবের।
বছরের প্রথম দিন সরকারি ছুটি হলেও ওই দিনই সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেবে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ১ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ার পরও বিদ্যালয় খোলা থাকবে ও বই উৎসব হবে। এবছর ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৮ শিক্ষার্থীর হাতে মোট ৩৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬০টি বই বিতরণ করা হবে। ইত্যোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নতুন বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে বলেও জানান তিনি।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন ও ভোকেশনাল স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ৯ কোটি পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৮৬৫ কপি নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়া হবে।
১৩০ লটে এসব বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রাক্কলিত ১৯২ কোটি ২৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৬৮ টাকা ১১ পয়সা দরপত্রে ছাপা হয়েছে। বই প্রতি গড় প্রাক্কলিত দর পড়েছে ২১ টাকা ২৩ পয়সা।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের হাতে পাঁচ কোটি ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৪১২ কপি পাঠ্যবই তুলে দেয়া হবে। ১৭৫ লটে এসব বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রাক্কলিত দর ১৪৩ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৫ টাকা ৬১ পয়সা ও বই প্রতি গড় প্রাক্কলিত দর ২৬ টাকা ৯০ পয়সা প্রাক্কলিত দর পড়েছে।
প্রাক প্রাথমিকে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৭৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৬৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৪২টি বই, প্রাথমিকের ২ কোটি ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৭টি বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রাথমিকের বিনামূল্যের চার রঙের পাঠ্যবই আন্তর্জাতিক দরপত্রে দেশেই মুদ্রণ করা হয়েছে। দেশীয় ২২ প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক সব বই ছাপার কাজ পায়। সব মিলে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০টি বই ছাপা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক ভারতীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নানা শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে এবার প্রাথমিকের বই ছাপার আদেশ বা টেন্ডার নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তারা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে ছাপার দায়িত্ব না দিলে অর্থ ছাড় করতে আপত্তির হুমকি দেয়। পরে আইনি বাধ্যবাধকতায় বিশ্বব্যাংক পিছু হটতে বাধ্য হয়। এজন্য বিলম্বে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরু হয়।
এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল নির্ধারিত সময়ের পরেও ধির গতিতে কাগজ সরবরাহ করে। দরপত্র পাওয়া ছাপাখানার মালিকরা অধিক লাভের আশায় পাঠ্যবই ছাপার কাজ রেখে নোটবই ছাপায়। পরে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল প্রকার নোটবই ছাপার কাজ বন্ধ রাখে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেখিয়ে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণের কার্যাদেশ পাওয়া ছাপাখানার মালিকরা দরপত্রের চেয়ে ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের দাবি জানায়।
এসব কারণে প্রাথমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়ে ছাপ শেষে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া নিয়ে চরম অনিশ্চতা দেখা দেয়। তবে এনসিটিবি কর্মকর্তরা দিনরাত নিরালস পরিশ্রম করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার দূরহ কাজটি শেষ করেছে।
এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) অধ্যাপক মিয়া ইনামুল সিদ্দিকী বলেন, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের শতভাই বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু উৎসবের অপেক্ষা ।
তিনি আরো জানান, সোমবার রাতে এক হাজার ট্রাকে করে চাহিদা অনুযায়ী প্রাথমিকের শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত (বাপার) বই আজ মঙ্গলবার রাতে পাঠানো হবে।
শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে সকাল ৯টায় বই উৎসবের উদ্ধোধন করবেন। একই দিন সকাল ১০টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান মিরপুরের ন্যাশনাল সরাকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্ধোধন করবেন।