ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশন এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে।
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সারা দেশের হাজার হাজার শিক্ষকরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। শিক্ষকদের স্বরচিত কবিতা, দেশাত্মবোধক এবং বিপ্লবী গানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরা শহীদ মিনার এলাকা।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাহিদুর রহমান বিশ্বাসের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে শিক্ষকদের দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে শিক্ষাবিদ ও সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক এএন রাশেদা বলেন, শুধু বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন না এটা, শিক্ষা রক্ষার আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সাম্যের ভিত্তিতে কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনসহ সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলো কই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিলো একমুখী শিক্ষার তা না মানার কারণে এখন বাংলাদেশেও মসজিদে বোমা হামলা হয়।
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় বেতনের অনুপাত ছিলো ১ অনুপাত ৫ আর এখন তা হলো ১ অনুপাত ১১। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কথা মানা হচ্ছে না। গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনি এরশাদের আমলে মন্ত্রী ছিলেন। শিক্ষকদের নানা ভাবে অপমান করেন আপনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সাথে আপনার স্বপ্ন মেলে না। শিক্ষকদের অমর্যাদা করলে সংগ্রামের সূচনা হবে আপনার বিরুদ্ধে।
মহাসমাবেশ থেকে শিক্ষকরা বলেন, দেশে টাকার অভাব নাই, অভাব শুধু দৃষ্টিভঙ্গির। এটা পাল্টাতে হবে। ছয় দফা দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজু, মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি মু্ক্তিযোদ্ধা ধরেন্দ্রনাথ মণ্ডল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভসহ শিক্ষক নেতারা।
মহাসমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক লিপি দিতে তার কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেন শিক্ষকরা। এসমসয় পুলিশ বাধা দিলে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধ দল স্মারকলিপি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান।
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো; সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে পুনঃনির্ধারণ, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে নিয়োগ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি, নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করে নারী-পুরুষের জন্য ন্যূনতম স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি যোগ্যতা নির্ধারণ, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ষোঘণা ও সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল করে দ্রুত পদন্নোতির ব্যবস্থা করা এবং অর্জিত ছুটির বিধান প্রণয়ন করা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফোরাম ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ এই চারটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফেডারেশন।