বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন সেতাবগঞ্জ চিনিকলে ২০১১-২০১২ উৎপাদন মৌসুমে উৎপাদিত ২০ কোটি টাকার অধিক ৩ হাজার ৭শ ৩৮ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত অবস্থায় গুদামে পড়ে রয়েছে।
চিনি বিক্রি না হওয়ার কারণে একদিকে যেমন শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দেওয়্ বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে আখের মূল্য বাবদ ২ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা চাষিদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেতাবগঞ্জ চিনি কলটি বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।
চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) মিজানুর রহমান জানান, সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে সেতাবগঞ্জ চিনিকল ৩ হাজার ৭৫০ মে.টন চিনি উৎপাদন করেছে। সরকার নির্ধারিত দরে যার বাজার মূল্য ২০ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নতুন উৎপাদিত এ চিনি গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ার পরও বেসরকারি রিফাইনিং মিলগুলো মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে বাজারে চিনি বিক্রি করছে। ফলে সরকারি চিনি অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে।
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলহাজ মো. আবুল রফিক জানান, গুদামজাত চিনি বিক্রি করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বার বার ধরনা দিয়েও আশানুরূপ চিনি বিক্রি করতে পারছি না। এদিকে ডিলাররাও তাদের নির্ধারিত কোটার চিনি উত্তোলন করেনি।
ইতোমধ্যে চিনিশিল্পের সদর দপ্তর ৫ শ’ মে. টন চিনি খোলাবাজারে বিক্রির আনুমোদন দিলেও ২৩ মার্চ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ২২ মে. টন। এ স্বল্প পরিমাণ চিনি বিক্রির অর্থ দিয়ে এই মিলের কোনো অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখনো আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ও আখ চাষিদের পাওনা পরিশোধ করতে পারিনি।’
এদিকে বেতন ভাতা না পেয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দৈনন্দিন কাজকর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
চিনিকলের কারখানা বিভাগের বয়লিং হাউজের মেকানিক শ্রী ধাম ও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত প্রায় ২ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চড়া সুদে ঋণ-দাদন নিয়ে দিনাতিপাত করছি। সকাল থেকে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী নিজ দায়িত্ব ফেলে পাওনা বেতন-ভাতা পাওয়ার আশায় ক্যাশ অফিসে এবং শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু সবার মুখে এক কথা চিনি বিক্রি হলে বেতন ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে।’
চিনিকল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাড়াই মৌসুমে ৬০ হাজার মে.টন আখ মাড়াই করে ৭.৫ গড় রিকভারি ভিত্তিতে ৪ হাজার ৫শ’ মে.টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গড় রিকভারি ধরা হয়েছিল ৭.৫ শতাংশ। মিলটি চলার কথা ছিল ৫৫ দিন। তবে মিলটি ৫২ দিনে ৫৫ হাজার ৯২১ মে.টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৭৫০ মে.টন চিনি উৎপাদন করে। যার গড় রিকভারি ছিল ৬.৭৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল সর্বপ্রথম চালু হয় ১৯৩৩ সালে পরে এটিকে আধুনিকীকরণ করে পুনরায় নতুনভাবে ১৯৮৩ সালে চালু করা হয়। কিন্তু কাঁচা মালের স্বল্পতা, ব্যাংক ঋণ, অব্যবস্থাপনার কারণে এখন বন্ধের উপক্রম মিলটি। গত কয়েক বছর ধারাবাহিক লোকসান, উন্নতজাতের আখের বীজ উদ্ভাবন না হওয়া, মেইন্টেনেন্সের নামে অর্থ লুটপাট এবং ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এজন্য দায়ী।