স্বাধীনতা পদক পেলেন ১০ গুণীজন

স্বাধীনতা পদক পেলেন ১০ গুণীজন

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের দশ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ২০১২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

রোববার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই দশ জনকে পুরস্কৃত করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিজ হাতে সম্মান করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। তারা যেভাবে কাজ করেছেন, আগামী প্রজন্ম সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে দেশ অভিশাপ মুক্ত হবে না।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এ সময় সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি। মানুষ তাদের অধিকার পাক, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের ওয়াদা ছিল দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে নেওয়া।’

এ বছর যারা পদক পেলেন
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে তথাকথিত আগরতলা ষডযন্ত্র মামলায় দুই নম্বর আসামি এবং ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত শহীদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (মরণোত্তর); বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সিরাজগঞ্জে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংগঠক এবং ১৯ মে ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত সিরাজগঞ্জের তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক শহীদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন (মরণোত্তর)।

ছাত্রী অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই চাঁদপুরে মুক্তিবাহিনীর চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনকারী এবং নির্যাতিত মহিলাদের সেবা প্রদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী; জন্ম আমার ধন্য হল মা গো- এর মতো বহু গণজাগরণমূলক গানের গীতিকার এবং ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তাবহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ীম গহর।

চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে বিশিষ্ট চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত; শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিসেবী ও খ্যাতনামা নজরুল গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাহিত্যক্ষেত্রে বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আবুল ফজল (মরণোত্তর); গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে দেশের অগ্রণী কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ও দীর্ঘকাল দৈনিক সংবাদ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী মরহুম বজলুর রহমান (মরণোত্তর) এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট পদার্থবিদ ড. কামরুল হায়দার।

মনোনীত ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়া মরণোত্তর পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা তা গ্রহণ করেন।

ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, নয়ীম গহর, প্রাণ গোপাল দত্ত, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, কাজী এম বদরুদ্দোজা এবং কামরুল হায়দার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেন।

মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে তার স্ত্রী কোহিনূর মোয়াজ্জেম, শহীদ আবুল কালাম শামসুদ্দিনের পক্ষে তার ছেলে আবুল কালাম সালাউদ্দিন, আবুল ফজলের পক্ষে তার মেয়ে মমতাজ জানাহ, বজলুর রহমানের পক্ষে তার স্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই পুরস্কার নেন।

২০১২ সালে যারা স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি মেডেল, দুই লাখ টাকার চেক এবং সম্মাননা পত্র দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূইঞা।

বাংলাদেশ